সর্বশেষ চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে চালের। এর ফলে মোটা চালেরই (স্বর্ণা ও পারিজা) দাম কেজি প্রতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকায়।
চালের দরের হঠাৎ উত্থান সম্পর্কে চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার একবার বাড়তির দিকে হলে দাম আর কমে না। সামনের দিনগুলোতে চালের দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই তারা মন্তব্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাবু বাজারের চালের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি মিনিকেট চাল ৫৬-৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৬৭ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৬-৪৯ টাকা এবং স্বর্ণা ও পারিজা ৪৯ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেজিপ্রতি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া মিনিকেটও বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৬২ টাকা। বিআর-২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২ টাকা । স্বর্ণা এবং পারিজা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪২-৪৩ টাকা।
আমন ধানের চাল বাজারে এলে চালের দরের কিছুটা পতন হতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অগ্রহায়ণ শেষ হতে চললেও বাজারে ছিটেফোঁটা আমনের চালই এসেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ আমন চাষ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আমন ধান বাজারে দাম কমতিতে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারবে না।
এছাড়া দেশীয় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চালের যোগানের শঙ্কট রয়েছে। তাই দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং চলতি মাসের শেষ দিকে আরেক দফা দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাবু বাজারের চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আরো বলছেন, দেশের চাল উৎপাদনের অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে এ বছর। সরকার যদি থাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে চাল আমদানি না করতো তাহলে দেশে হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিত।
বোরো মৌসুমের ( এপ্রিল-জুন) চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম বাড়তি থাকবে বলেও জানান তারা।
বাবু বাজারের চালের পাইকারি দোকান মায়া ট্রেডার্স ম্যানেজার রুস্তম আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে বাজার একবার রাইজিং করলে তা কমবার সম্ভাবনা কম। এছাড়া আমন চাষে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ফলে চালের দাম কমার আশা করা যায় না। সামনের দিনগুলোতে বাজারে চালের দাম আরো বাড়তে পারে।
বাবু বাজারের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স দয়াময় ভাণ্ডারের পরিচালক নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, চালের দামের কমতি আমরা এই মুহূর্তে চিন্তা করতে পারি না। মোকামে গিয়ে ৫০ টাকা কেজি চাল ৫৫ টাকা দিয়েও পাই না। এতো বেশি দামে কিনে কিভাবে কম দামে বিক্রি করব।
তবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি মজুত এবং কৃষকের গোলা মিলিয়ে বর্তমানে দেশে কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টন চাল রয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, গত নভেম্বরে দেশে ৭০ লাখ টন চালের মজুত ছিল।
চালের এমন ঊর্ধ্বগতির দর নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী বলছেন, দেশে যে পরিমাণে চালের মজুত আছে তাতে এতো সঙ্কট হওয়ার কথা না। বরং দাম স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মাঝখানে বসে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এখনো চালের অবৈধ মজুত করে যাচ্ছেন। ফলে দাম দিনকে দিন ঊর্ধ্বগতির দিকে চলে যাচ্ছে।
এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং ও বোরো ধানের আবাদ যেন ভালো হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করা উচিৎ বলেও তারা মত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এমএসি /আরআই/জেডএম