আমন ধান কেটে ঘরে তোলার আগেই প্রচুর বৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ নেমে আসে। এখনও জমিতে পানি জমে থাকায় রবি আবাদ শুরু করতে পারছেন না কৃষকরা।
ধান কেটে ঘরে ওঠানোর শেষের দিকে ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাত থেকে ১০ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত টানা চারদিন লক্ষ্মীপুরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ওই সময় প্রায় ৪০ ভাগ পাকা ধান ক্ষেতে ছিলো। একদিকে পাকা ধানের ক্ষতি; অপরদিকে জমি পানিতে ডুবে থেকে রবি আবাদ অনিশ্চিত। সেই থেকেই কৃষকদের মধ্যে হতাশা।
যদিও নির্ধারিত সময় পার করে শস্য আবাদ করা হয়; তবে আগামী বর্ষার আগে ফসল ঘরে তোলা কঠিন হবে। গত বছর যথাসময়ে আবাদ করেও আগাম বর্ষার কবলে সয়াবিন, বাদাম, মরিচ ও তরমুজের সর্বনাশ হয়েছে।
সম্প্রতি রামগতির আলেকজান্ডার, বালুর চর ও কমলনগর ঘুরে দেখা গেছে, এখনও জমি পানিতে ডুবে আছে। কিছু জমিতে পানি সরে গেলেও মাটি কাদা হয়ে আছে। তাতে লাঙল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, পানি থাকা জমিতে দেড়-দুই সপ্তাহেও লাঙল দেওয়া যাবে না, বীজ রোপণের জন্য মাটি শুকানো ও জমি উপযোগী হওয়া পর্যন্ত আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ। এভাবে এক মাস সময় লেগে যেতে পারে জমিতে রবি শস্য রোপণ করতে।
চর মার্টিন এলাকার কৃষক দ্বীন মোহাম্মদ জানান, যথাসময়ে জমি উপযোগী করে রোপণ করতে না পারলে আগামী বর্ষার আগে ফসল কেটে ঘরে নেওয়া সম্ভব হবে না। তাতে তারা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
লক্ষ্মীপুর সয়াবিন উৎপাদনে দেশের শীর্ষে। দেশে উৎপাদিত প্রায় ৮০ ভাগ সয়াবিন এ উপকূলীয় জেলার। যে কারণে লক্ষ্মীপুরকে সয়াবিনের রাজধানী বলা হয়। এ জেলায় বরি মৌসুমের প্রধান ফসল সয়াবিন। চলতি মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় কৃষরা এখনও সয়াবিন আবাদ করতে পারছেন না।
মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমি শুকনো থাকলে এতোদিনে অর্ধেক জমিতে সয়াবিনের বীজ রোপণ করা হয়ে যেতো।
লক্ষ্মীপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুম। সে হিসেবে মৌসুমের দেড় মাস শেষ। অবশিষ্ট সময় রবি ফসল ঘরে তোলার জন্য যথেষ্ট নয়।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বেলাল হোসেন খান বলেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে টানা সাড়ে তিন থেকে চারদিন বৃষ্টি হয়েছে। তাতে জমিতে পানি জমেছে। যে কারণে রবি ফসলের বীজ রোপণ করা যাচ্ছে না। সয়াবিন, বাদামসহ অন্যান্য ফসল রোপণে বিলম্ব হলে কালবৈশাখীর প্রভাব পড়বে ফসলের ওপর। অপরিপক্ক সয়াবিনসহ অন্যান্য ফসল বৃষ্টিতে ক্ষতি হতে পারে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নোয়াখালী বিএআরআই’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মহীউদ্দীন চৌধুরী বলেন, জমিতে পানি, বেশিরভাগ মাটি কাদাযুক্ত। মাটির এ পরিবেশ বরি ফসলের জন্য উপযুক্ত নয়। এ মৌসুমে নোয়াখালী অঞ্চলের অর্ধেক জমিতেও সয়াবিনসহ অন্যান্য রবি ফসলের চাষ হবে না। যদিও বিলম্বে আবাদ করা হয় তাও ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
জেডএস