ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

ফেনী: খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন হালের বলদ, লাঙল-জোয়ালই ছিল কৃষকের মূল ভরসা। সারাদিন কায়িক শ্রমের বিনিময়ে মাঠে ফলতো সপ্নের ফসল। আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সেদিন আর নেই। নতুন নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহারে দেশের কৃষিখাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ, অপরদিকে কয়েকগুণ বেড়েছে উৎপাদন।

অতীতে যখন লাঙল-জোয়াল আর ‘হালের বলদ’ ছিল কৃষকের চাষাবাদের মূল উপকরণ সে জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে পাওয়ার টিলার। এখন সনাতন যন্ত্রাপাতি হিসেবে লাঙল-জোয়ালকে প্রদর্শন করা হয় উন্নয়ন মেলায়।

ধারণা করা হচ্ছে নতুন প্রজন্ম সচরাচর এসব যন্ত্রপাতি আর দেখেবে না দেখতে হলে যেতে হবে যাদুঘর কিংবা কোন প্রদর্শনী স্টলে। ফেনীতে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টলে পরিদর্শন করতে গেলে বাংলানিউজকে এমনটাই জানান কৃষিবিদ ড. খালেদ কামাল।
 
তিনি পরিচয় করিয়ে দেন মেলায় প্রদর্শিত কয়েকটি আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে। যেগুলোর ব্যবহারে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষিতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:-

রাইস ট্রান্সপ্লান্টার

রাইস ট্রান্সপ্লান্টার
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ সুবিধার কারণে যন্ত্রটির প্রতি দিন দিন আগ্রহী হয়ে পড়ছে কৃষকরা। রাইস্ ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র ব্যবহার করে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় চারা রোপণ করা যায়। একজন শ্রমিক ঘণ্টায় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করতে পারে। যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জ্বালানি খরচও খুব কম, ঘণ্টায় মাত্র ০.৫-০.৬ লিটার অকটেন প্রয়োজন পড়ে। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে বীজতলা তৈরি করার জন্যও আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানেই বীজতলা তৈরি করা সম্ভব।

ইনক্লাইন্ড প্লেট সিডার

ইনক্লাইন্ড প্লেট সিডার
ফসলের জমির সারিতে এ যন্ত্রটির সাহায্যে বীজ বুনলে কম বীজ লাগে, সহজে আগাছা পরিস্কার করা যায়, গাছ বেশি আলো বাতাস পায় এবং সর্বোপরি উৎপাদন বাড়ে। সারিতে ও নির্দিষ্ট দূরত্বে এবং গভীরতায় সহজে বীজ বোনার জন্য পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়। এ যন্ত্র দিয়ে চাষ করা জমিও চাষবিহীন অবস্থায় বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ধান, গম, ভুট্টা, পাট, তৈল বীজ ও ডাল শস্য সারিতে বোনা যায়। এ যন্ত্রটি ব্যবহারে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ১০-৪০ শতাংশ বীজ কম লাগে এবং ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতিতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ০.১৮ হেক্টর (৪৫ শতাংশ) জমিতে বীজ বপন করা যায়।

রিপার

রিপার
ধান ও গম কাটার যন্ত্র ‘রিপার’ ফসল কাটার মৌসুমে এ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এই মেশিন ব্যবহার করে ১ ঘণ্টায় ৬৬ শতাংশ জমির ধান ও গম কাটা সম্ভব এবং এখানে পেট্রোল খরচ হচ্ছে মাত্র ১ লিটার। যেখানে সনাতন পদ্বতিতে প্রয়োজন হচ্ছে ১০/১২ জন শ্রমিকের, যার খরচ নূন্যতম ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস বলছে এ যন্ত্র ব্যবহারে সাশ্রয় হচ্ছে ৯২ ভাগ খরচ, শ্রম ও সময় ব্যয় কমে প্রায় ৯০ ভাগ।  
 
বেড প্লান্টার
বেড-নালা তৈরী করে আবাদ করতে এ যন্ত্রটি ব্যবহার হয়। আলু, ভুট্টা, মরিচ, সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল বীজ-ফারো বা বেড-নালা তৈরি করে আবাদ করা হয়। বেড পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করলে বাতাস সহজেই গাছের শিকড়ের কাছে যেতে পারে। এ যন্ত্রের ব্যবহারে ১-২টি চাষে বেড তৈরি, সার প্রয়োগ ও বীজ বপনের কাজ একই সঙ্গে করা যায়, স্থায়ী বেডেও বীজ বপন করা যায়, যন্ত্রটি প্রতি ঘণ্টায় ০.১১ হেক্টর জমিতে বেড তৈরি করতে পারে।

বেড প্লান্টার

কম্বাইন্ড হারভেস্টার
অনেকটা ট্রাক্টরের মত দেখতে এ যন্ত্র দিয়ে একই সাথে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তায় ভরা যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো যায়। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে সময় বাঁচায় ৭০-৮২ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান বা গম কাটতে খরচ হয় প্রায় ছয় হাজার টাকা। সেখানে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারে লাগে মাত্র ৪০০ টাকা। এটি অল্প কাদার মধ্যেও ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে এ যন্ত্র দিয়ে ফসল কাটার পর খড়ও আস্ত থাকে।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. খালেদ কামাল বাংলানিউজকে জানান, দিন দিন ফসলের জমি কমে যাচ্ছে অপরদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। আর সে কারণেই অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
এসএইচডি/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।