মেধা আর কঠোর পরিশ্রম করে একাধারে ধান, সরিষা, আলু, পটল, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে চলেছেন তিনি।
তবে এবার পরিত্যক্ত ভিটে মাটিকেও চাষাবাদ উপযোগী করে তুলেছেন।
আজাহার আলী বাংলানিউজকে জানান, বছর খানেক আগে বাড়ির পাশের ১০ কাঠা জমির জঙ্গল পরিষ্কার করে চায়না-৩ জাতের লেবু গাছের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে লেবু গাছে থোকা থোকা ফুল ও ফল এসেছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু লেবু বিক্রি করেছেন। গত চৈত্র মাসে ওই জমিতে প্রথম চায়না বেগুনের চারা রোপণ করেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বেগুন উত্তোলন শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে চার/পাঁচ মণ করে বেগুন উত্তোলন হতো তার। বাজার দরও বেশ ভালো ছিল সেসময়। সে সময় প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছেন ১৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দরে।
কিন্তু ভাদ্র মাসের শেষের দিকে বন্যার পানিতে বেগুন ক্ষেতটি তলিয়ে গিয়ে গাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তবে তার আগ পর্যন্ত ওই জমি থেকে প্রায় ২৫/২৬ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। চাষাবাদে খরচ হয়েছিল মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা।
তিনি আরো জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপর আবারও একই জাতের চারা রোপণ করেন। দেড় মাস ধরে বেগুন বিক্রি করছেন। সপ্তাহে চার/পাঁচ মণ করে বেগুন বিক্রি করছেন। প্রথম দিকে মণ প্রতি দুই হাজার টাকা দরে বেগুন বিক্রি হয়েছে। এখন প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২ শ' টাকা থেকে ১৪শ' টাকায়। নতুন করে চাষ করা এ ক্ষেত থেকে এ পর্যন্ত তার প্রায় ২০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবং বাজার দর ভালো থাকলে এ জমি থেকেই আরো অন্তত ২৫/৩০ হাজার টাকার ফসল বিক্রি হবে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করার ফলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচও কম হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় চারা রোপন, সার, সেচ, নিড়ানীসহ এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা।
বেগুনের পাশাপাশি লেবুও বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এক মাস ধরে তিনি চার/পাঁচ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। বাজারে এ জাতের লেবুর বেশ চাহিদা। এখন তিনি বেগুন আর লেবু এক সঙ্গে বিক্রি করছেন।
আগামী কয়েক মাস এভাবেই লেবু ও বেগুন বিক্রি করবেন। একই জমিতে লেবুর পাশাপাশি বেগুন চাষ করে ফসল চাষে তিনি সফল হয়েছেন। আগামীতে তিনি চাষাবাদের পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করছেন।
তিনি বলেন, পৈত্রিক পাঁচ বিঘা জমি দিয়ে কৃষিতে যাত্রা শুরু করেছি। বিভিন্ন সময়ে সমন্বিত ভাবে পটল, আলু, পেঁয়াজ, মশুর, বেগুন, সরিষা ও ধান আবাদ করে আরো সাত বিঘা জমি কিনেছি। কৃষি থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছি। সংসারের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিচ্ছি। বর্তমানে আমার জমির পরিমাণ প্রায় ১৪ বিঘা।
এ বছর তিনি আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা, পৌনে দুই বিঘায় মশুর, এক বিঘায় পেঁয়াজ, ১০ কাঠায় রসুন এবং এক বিঘায় আলু চাষ করেছেন। এছাড়া আট বিঘা জমিতে বোরো ধান ও ১৫ কাঠায় পটল চাষ করার ইচ্ছা তার। এজন্য নিজস্ব জমি ছাড়াও কিছু বর্গা জমিও প্রস্তুত রেখেছেন তিনি।
আজাহার আলী বলেন, চেষ্টা আর সময়মতো পরিশ্রম করলে খুব সহজে কৃষিতেই সফলতা আসে। অল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আজাহার আলীকে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এসআই