ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সিলেটের মাচার শিম যাচ্ছে ঢাকায়

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
সিলেটের মাচার শিম যাচ্ছে ঢাকায় গাছে ঝুলছে শিম। ছবি: আবু বকর

সিলেট: কুয়াশায় ঘাসের ওপর সাত রং ছড়াচ্ছে শিশির বিন্দু। কৃষাণ-কৃষাণীর পায়ের আলতো ছোঁয়ায় বিলীন প্রকৃতির সেই রং-রূপ। সেদিকে নজর দেওয়ার ফুসরত নেই কৃষক পরিবারের। তাদের কেবল একটিই নেশা- আকাঙ্ক্ষার ফলন শিম বাজারে তুলে বিক্রি করা।     

মাচাজুড়ে সবুজ লতাগুল্ম ভেদ করে ঝুলছে শিমের লহর। তা দেখে খুশির শিহরণে পালিয়ে বেড়ায় শীতও।

থোকায় থোকায় শিম আহরণ করে খাঁচায় ভরে বাজার ধরতে হবে, সেদিকেই খেয়াল কৃষক জিতু মিয়ার। তার মতো সিলেটের গোলাপগঞ্জের হাজারো কৃষকের ব্যস্ততা এখন শিমের শামিয়ানা ঘিরে।  

জিতু মিয়া এবার সাড়ে ৩ কেদার (১০৫ শতক) জমিতে শিম ক্ষেত করেছেন। এই জমি চাষ করতে দেড় লাখ খরচ হলেও ৩ লাখের ওপর টাকা পাবেন- এমন আশার কথা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মাঝখানে ক’দিন বৃষ্টি না হলে ফলন আরো ভালো হতো। প্রতিকেজি শিমে এবার দামও ভালো পাচ্ছেন। গত বছর এমন দিনে ১০ টাকা কেজি শিম বিক্রি করলেও এবার কেজিপ্রতি মিলছে ২৫ টাকা।  

মাচায় চাষ শিম।  ছবি: আবু বকরস্থানীয় ঝাপা এলাকার ষাটোর্ধ্ব রহমত আলী বলেন, বাবা-চাচারাও শিম ক্ষেত করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও এই মৌসুমে ধানী জমিতে শিম ক্ষেত করি। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শিমের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় পুরকাতি (পুরকায়স্ত) বাজারে প্রতিদিন সকাল-বিকেলে বসে শিমের বাজার। এবার ২ কেদার জমিতে শিম করেছেন তিনি।  

রাখালগঞ্জ এলাকার খালিক আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন, হেতিমগঞ্জ, লক্ষণাবন্দ এলাকার রাখালগঞ্জ, এলাহীগঞ্জ জাঙ্গালহাটা, দৌলতপুর, জাপা, দঁড়া, কোনাচর, দারাবহর, ফুলসাইনসহ সব এলাকায় বেশি শিম ক্ষেত হয়।  

ঢাকায় নেওয়ার জন্য শিম স্তূপ করা হয়েছে।  ছবি: আবু বকরস্থানীয় পুরকায়স্ত বাজারে পাইকারি শিম কিনতে আসা ব্যবসায়ী মছব্বির আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় বাজারে থেকে ২৫/২৬ টাকা কেজি দরে ৫-৬শ’  কেজি শিম কেনেন। এই শিম ঢাকার শ্যামবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। তার মতো অগণিত পাইকার শিম কিনে বিভিন্ন নগরে নিয়ে ৩৫/৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। বলেন তিনি।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ধানী জমি, মাঠে, সড়ক সংলগ্ন খোলা জায়গা ও বাড়ির আঙিনাজুড়ে রয়েছে শিমের সবুজ শামিয়ানা। থোকায় থোকায় শিম পরিপক্ব হয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে শিমকে রক্ষায় যত্ম নেওয়া ও বিক্রির জন্য ক্লান্তিহীন সময় পার করছেন কৃষকরা।  

কৃষকরা জানান, বারি শিম-১ ও ২, আশ্বিনা, ইপসা, গোয়াল গাদ্দা, হাতির কানি, ফরাসসহ স্থানীয় জাতের আরও কিছু শিম ক্ষেত করা হয়েছে। বিশেষ করে এই উপজেলার মাটি শিমের চাষের জন্য প্রসিদ্ধ, যে কারণে শিমের ফলন বেশি হয়। জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র।  

এছাড়াও বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জের বাহুবল, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জেও শিমের ফলন ভালো হয়- এমনটি জানান সংশ্লিষ্টরা।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রবি মৌসুমে এবারো সিলেট বিভাগে ৭ হাজার ২শ ৯৭ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সর্বাধিক শিমের চাষ সিলেটে ৩ হাজার ৩২৭ হেক্টরে। সর্বনিম্ন মৌলভীবাজারে ৭৮০ হেক্টর। এছাড়া হবিগঞ্জ ১ হাজার ১৪০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৫০ হেক্টরে শিমের চাষ হয়। যে কারণে শিম চাষে এ অঞ্চলের খ্যাতি রয়েছে সবখানে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।