জোতপুরের কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী এই সোলার পাম্পেই তাদের পোড়া স্বপ্ন সবুজ হয়ে উঠেছে। খরাপ্রবণ বরেন্দ্রের লাল মাটিতেও শস্য ফলছে।
অথচ বরেন্দ্রের পোড়ামাটির কথা কার না জানা নেই। বরেন্দ্রভূমির নামকরণের পেছনেও প্রচলিত রয়েছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী। চরম পানি স্বল্পতায় এক সময় এখানে ফসল ফলানোই দায় ছিল। ধূসর হয়ে উঠেছিল এখানকার প্রকৃতি। কিন্তু মাটির ধরন না পাল্টালেও কালের আবর্তে এখানকার চাষাবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রায় ১৫ হাজার পাম্প বিদ্যুতেই চলছে। তবে চাষাবাদে একটা পরিবর্তন আনতে গেল বছর সোলার এনার্জি যুগে পা রাখে বিএমডিএ। ভবিষ্যতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের বৃহৎ পরিকল্পনায় বর্তমানে গোদাগাড়ী জোনে স্থাপন করা হয়েছে সৌরচালিত ১৩টি পাম্প।
তবে পরিকল্পনায় রয়েছে ৩০টি পাম্প। এরমধ্যে আরও ১৪টি পাম্পের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে এই জুনে। উপজেলার সরমঙ্গলা খালেও একটি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। যখন বৃষ্টির পানি থাকবে না তখন পদ্মা থেকে পানি পাম্প করে এনে সেচ দেওয়া হচ্ছে।
এভাবে চাষাবাদ করলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরও চাপ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএমডিএ’র পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপিত এই সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পগুলোতে ইতোমধ্যে সফলতা এসেছে।
জোতপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ও সাইফুল বাংলানিউজকে জানান, এক সময় পানির অভাবে ফসল ফলানো খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। পানি সংকটে শত শত বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকতো। এই খরাপ্রবণ জমিতে বিএমডিএ পরীক্ষামূলক সৌরচালিত পাম্প বসিয়ে সফল হয়েছে। আর সেচের পানি পেয়ে কৃষকরাও তাদের জমি শস্য শ্যামলা করে তুলেছেন।
সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হলে কেবল জোতপুরই নয়, এই জোনের প্রতিটি গ্রামই সবুজ হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বিএমডিএ’র গোদাগাড়ী জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী জেলায় এবং পাশের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে সৌরচালিত সেচ পাম্প চালিয়ে সফলতা এসেছে। এতে কৃষকরা খুবই উপকৃত হয়েছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে বিএমডিএ’র অধীনে ১৩টি সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প স্থাপন করে সফলতা মিলেছে। দুই কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন এই পাম্পের সাহায্যে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেচ দেওয়া যায়। সাধারণত আকাশে সূর্য ও রোদ থাকলেই পাম্প চালানো যায়। প্রতিটি ১১ কিলোওয়াটের এই পাম্প স্থাপন করতে তাদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। তবে সোলার প্যানেলের ক্ষমতা ৪৫ কিলোওয়াট। এতে সেচ সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ১৮০ বিঘা জমির ফসল।
এর ধারাবাহিকতায় আরও ৩০টি পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি পাম্প স্থাপনের কাজ এই জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন খরচ কমছে তেমনি বিদ্যুতের চাহিদাও কিছুটা কমবে বলে মনে করেন সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুল বারী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৮
এসএস/আরআর