ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সময়ের আগেই শোভা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
সময়ের আগেই শোভা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল আম গাছের শাখায় শোভা পাচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল-ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: হাড় কাঁপানো শীত বিলিয়ে সদ্যই বিদায় নিয়েছে পৌষ। বাংলা পঞ্জিকায় অভিষিক্ত হয়েছে বহু আচার-অনুষ্ঠান আর সৃষ্টির মাস মাঘ। বিশেষত রাজশাহীর মানুষের কাছে কাঙ্খিত একটি মৌসুম। সাধারণত এই মাসের শেষেই আম গাছে মুকুল আসে। আম প্রধান এই অঞ্চলের মানুষের সময় কাটে আম গাছ ও মুকুলের যত্নআত্তি নিয়েই।

কিন্তু খানিকটা হলেও ব্যত্যয় ঘটেছে এবার। মাঘের শুরুতেই রাজশাহীর অনেক আম গাছে আসতে শুরু করেছে আগাম মুকুল।

পৌষের শেষেই আগাম এই মুকুলে আম চাষিদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। তবে আগাম মুকুল দেখে আম চাষিরা অনেকে খুশি হলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শীত বিদায় নেওয়ার আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। এখন ঘন কুয়াশা পড়লে গাছে আগেভাগে আসা মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ফলনেও প্রভাব ফেলবে।

মহানগরীর গৌরহাঙ্গা, শিরোইল, ভেড়িপাড়া, পুলিশ লাইন, মালোপাড়া, মেহেরচণ্ডি ও ভদ্রা আবাসিক এলাকা ঘুরে গাছে বেশ কিছু আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। সোনারাঙা সেই মুকুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে।  

আমের মুকুলে তাই এখন মৌমাছির গুঞ্জন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর ব্যঞ্জনা। শীতে স্নিগ্ধতার মধ্যেই শোভা ছড়াচ্ছে স্বার্ণালি মুকুল। বছর ঘুরে আবারও তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আমপ্রেমীদের মন। আমের শহর রাজশাহীর মানুষের কাছে ঋতু বৈচিত্র্যে এবারের শীত বিদায়ী মাঘ মাস ধরা দিয়েছে এভাবেই। তাই নগরজীবনে চলার পথে ঘুরে ফিরে আমগাছের মগডালেই উঠছে পথচারীর চোখ। আম গাছের শাখায় শোভা পাচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল-ছবি-বাংলানিউজতবে মহানগরের পথে-প্রান্তরে চোখ মেলে সদ্য মুকুল ফোটার এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা গেলেও ভিন্ন চিত্র গ্রামে। গ্রামের আম বাগানগুলোয় এখনও মুকুল আসেনি। সেখানে চলছে কেবলই গাছের পরিচর্যা।

রাজশাহীর শিরোইল এলাকার আম ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, টানা বেশ কয়েক বছর পর রাজশাহীতে এবার তীব্র শীত পড়েছে। শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্রকৃতিতেও এসেছে ভিন্নতা। তাই মাঘের শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে আমের মুকুল আসার কথা থাকলেও এবার প্রায় এক মাস আগে মধ্য জানুয়ারিতেই কিছু গাছে মুকুল এসেছে।  

কিন্তু মাঘ মাসজুড়ে যদি ঘন কুয়াশা স্থায়ী হয় তাহলে মুকুলের ক্ষতি হবে। পাউডারি মিলডিও রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব মুকুলের অধিকাংশই ঝরে যাবে। ফলে এ ধরনের বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।  

এদিকে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও ফল গবেষণাগারের তথ্যমতে, গত বছর রাজশাহী জেলায় আমের বাগান ছিল ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টরে জমিতে। এ বছর বাগানের পরিমাণ কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে প্রতি বছরই কিছু আম গাছে আগাম মুকুল আসে। এবারও আসতে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশার কবলে না পড়লে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যায়। আর আবহাওয়া বৈরী হলে ফলন মেলে না। তবে নিয়ম মেনে শেষ মাঘে যেসব গাছে মুকুল আসবে সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে।  

রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি বছরই নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে। তাই এবারও আবাদের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় সব জেলাতেই এখন বড় বড় আম বাগান রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে।  

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বলেন, এবার তীব্র শীতেই আম গাছে আগাম মুকুল এসেছে। তবে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ থাকলে এ মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আবহাওয়ার উন্নতি হয়ে তাপমাত্রা একটু বাড়লে সমস্যা হবে হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।