অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশ লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে কলা চাষির সংখ্যাও।
শিবচর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল, পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের পাশের জমিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষযোগ্য জমির পাশাপাশি পতিত জমিতে করা হয়েছে অসংখ্য কলার বাগান।
যেখানে অন্যান্য ফসল করে লাভবান হতে পারছে না স্থানীয় চাষিরা, সেখানে কলা চাষে সফল হচ্ছেন। ফলে দিন দিন বাড়ছে কলার বাগানের সংখ্যা। এতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন চাষি। একরের পর একর কলার বাগান করে বছর শেষে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারায় স্থানীয় অনেক যুবকেরা পেশাও বদলাচ্ছেন। অন্য পেশা ছেড়ে আসছেন কলা চাষে।
শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তৃত জমিতে কলার বাগান। পরিচর্যায় ব্যস্ত বাগানের মালিক-কর্মচারীরা।
পদ্মানদী বেষ্টিত মাদারীপুরের মাদবরেরচর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের পতিত জমির বেশির ভাগেই বালু মাটির আস্তরণ। অন্যান্য ফসল যেখানে তেমন ভালো হচ্ছে না, সেখানে কলা বাগান করে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন অনেকেই। এ ইউনিয়নের মোল্যাকান্দি এলাকার কয়েকজন কলা চাষি জানান, অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে কলা চাষে খরচ কম, লাভও বেশি। এ এলাকার যেসব জমিতে আগে ধান চাষ হতো, এখন সেখানে করা হচ্ছে কলা বাগান।
ভালো লাভ হওয়ায় ওই এলাকার এক চাষি অন্যের জমি বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে কলা বাগান করেছেন।
স্থানীয় চাষি বারেক মোল্লা ও আক্কাস মোল্লা জানান, তারা বিগত চার বছর ধরে কলা চাষ করছেন। এর আগে ভালো লাভ হয়েছে। এজন্য এ বছর নিজের এক বিঘা জমির পুরোটাতেই কলা বাগান করেছেন। কয়েক মাস পর তার বাগানের কলা বিক্রির উপযোগী হবে।
তারা জানান, আগের মৌসুমে কলা বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। সব মিলিয়ে অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভের অংক একটু বেশি হওয়ায় কলা চাষ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
ওই এলাকার আরো এক কলা চাষি মো. ওমর ফারুক জানান, চলতি মৌসুমে ৪৫ বিঘা জমিতে তিনি কলা বাগান করেছেন। আট থেকে ১০ জন কর্মচারী তার বাগানে কাজ করেন। তিনিও নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করে আসছেন। কলা চাষে সফল হওয়ায় এটাই এখন একমাত্র পেশা তার।
জানা গেছে, পদ্মাবেষ্টিত মাদবরেরচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ব্যক্তিগত জমি ছাড়াও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে স্থানীয় অসংখ্য যুবক কলা চাষ করছেন। বিঘা প্রতি বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা। বিঘা প্রতি কলা চাষে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় চারশ’ কলা গাছ লাগানো হয়। মৌসুম শেষে প্রতি বিঘা বাগান থেকে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কলা বিক্রি করা যায়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানের ক্ষতি হলে লাভের পরিমাণ কিছুটা হেরফের হয়।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের দিকে জমিতে কলা গাছ লাগানো হয়। পরবর্তী বছর এ সময়ে কলা বিক্রির উপযোগী হয়। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার উৎপাদিত কলার অন্যতম বিক্রির স্থান। দেশীয় হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। বাজারের দোকানিরা ভালো দামে বিক্রি করতে পারে এসব কলা।
শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার প্রায় দুইশ’ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। এসব জমিতে সবরী ও মেহেরসাগর কলা উৎপাদন করা হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, শিবচর উপজেলায় দিন দিন কলাচাষে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে কলা চাষ করছেন। বিগত বছরগুলোতে ধান, পাট বা বিভিন্ন রবিশস্য চাষে অনাগ্রহীরাই মূলত কলা চাষে ঝুঁকেছেন। কলা চাষে কৃষি কর্মকতারা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
এসআই