তিস্তা চরাঞ্চলের চাষিরা জানান, তিস্তার ভাঙনের ফলে ভিটে মাটি হারা মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার চরাঞ্চলের বালুতে বিভিন্ন ফসল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় তারা চাষ করেন আলু, গম, ভূট্টা, তামাক, গাজর, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন জাতের সবজি।
পানিতে ভরে উঠেছে চরাঞ্চলের নালা ও ডোবাগুলো। ফলে চরাঞ্চলের তুলনামূলক উঁচু জমির ফসলে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা। এসব উঁচু জমির ফসলে কোনো ক্ষতি হয়নি। এ কারণে পানি বৃদ্ধি একদিকে কোনো কোনো চাষির স্বপ্ন কেড়ে নিলেও কারো কারো স্বপ্ন পুরনের সুযোগ করে দিয়েছে। চাষিদের ঘরে হাসি কান্নার মিলন ঘটিয়েছে তিস্তার অসময়ের এ পানি।
আদিতমারীর গোবর্দ্ধন চরের চাষি তাহাজুল, আলমগীর ও মানিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, চরাঞ্চলের এসব ক্ষেতে কোন আইল না থাকায় সরাসরি ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে। পানি প্রয়োজন তবে তা হঠাৎ বেশি পরিমানে আসায় তাদের ক্ষতি হয়েছে। আগাম পূর্বাভাস দিয়ে এ পানি ছেড়ে দিলে ক্ষতি নয়, বড় উপকারে লাগত তাদের। এ পানিতে শুধু আগাম ভুট্টা ও গম ক্ষেতের উপকার হয়েছে। বাকী সব ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
সিংগিমারী চরের চাষি মাহবুবার রহমান পাখি (৬৫) বাংলানিউজকে জানান, চরাঞ্চলের আধা বিঘা জমিতে ২/৩ হাজার টাকা খরচ করে পিঁয়াজ চাষ করেছেন। ক্ষেত হয়েছিল দেখার মত। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাতেই ক্ষেতে গিয়েছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারেননি ক্ষেত। পচে নষ্ট হয়েছে তার হারভাঙ্গা কষ্টের ফসল।
পাসাইটারী চরের চাষি আজিজুল হক বাংলানিউজকে জানান, এক বিঘা জমিতে গাজর, পিঁয়াজ ও রসুন চাষ করেছেন। হঠাৎ তিস্তার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে তার এসব ক্ষেত। পানি ছেড়ে দেওয়ার খবর আগে জানা গেলে যত কষ্টই হোক আইল বেঁধে কষ্টে লালিত স্বপ্নকে রক্ষা করতেন বলে জানান তিনি।
চর ধুবনী গ্রামের ভূট্টা চাষি আক্কাস আলী ও ফজু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া এ পানি তাদের আগাম জাতের ভূট্টা ক্ষেতে প্রচুর উপকার দিয়েছে। উৎপাদনে সেচ খরচ কমে আসার পাশাপাশি ভূট্টার ফলনও বেশ ভাল হবে। আগাম জাতের ভূট্টায় বেশ লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও অন্যান্য ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। পানিতে ডুবে থাকলে ফসল নষ্ট হয়। বিশেষ করে পিঁয়াজ ও রসুন। তবে শুক্রবার (২ মার্চ) সকাল থেকে পানি কমে গিয়ে আবারো মরুভুমিতে পরিণত হতে শুরু করেছে তিস্তা নদী।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৮
আরএ