বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্নে নদীর কাছাকাছি মাসিক ভাড়ায় আবার কেউ রাস্তার ধারে জমি নিয়ে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। পরের বন্যায় সেই স্বপ্নও বিলীন হয় তিস্তার গর্ভে।
ফসলের চারা গাছ বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিদিন সেচ দিতে হয় চরাঞ্চলের চাষিদের। সেক্ষেত্রে তারা পলিথিনের বিশেষ পাইপের সাহায্যে ক্ষেতে সেচ দেন। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই ক্ষেতে কাজ করেন। কারণ এ শুষ্ক মৌসুমে উৎপাদিত ফসল ও তার আয়ে চালাতে হবে সংসারের সারা বছরের খরচ। টানা ৫ বার বসতবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে শেষবারের মত নদী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর চওড়াটারীতে এক আত্মীয়ের জমিতে বসতবাড়ি করে বাস করছেন আরিফুর রহমান (৪৮)। তার বাপদাদার ভিটেমাটি সদর উপজেলার খুনিয়াগাছের চরে। দীর্ঘ ২১ বছর পর এই প্রথম পলি পড়ে চাষাবাদযোগ্য হয়ে উঠেছে নদী গর্ভে যাওয়া তাদের জমি। তাই প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হারভাঙ্গা পরিশ্রম করে চাষ করেছেন মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, আলু ও তামাক।
আরিফুর রহমান জানান, এক সময় গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ সবকিছু ছিল তাদের। সংসারে অভাবের কোনো চিহ্ন ছিল না। তিস্তার ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব তারা। নতুন করে বাঁচতে ২১ বছর পরে জেগে উঠা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে ভাল মুনাফা হবে বলে আশা করছেন।
গোবর্দ্ধন চরের ছলে মাহমুদ (৫৫) বাংলানিউজকে জানান, একে একে ৬ বার ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। গত ৫ বছর ধরে তাদের চরাঞ্চলের জমিতে পলি পড়ায় গম, আলু, ভূট্টা ও পিঁয়াজ চাষাবাদ করছেন। এখন নদী থেকে দূরে মহিষখোচায় জমি কিনে স্থায়ীভাবে বাড়ি করেছেন।
মারাইরহাট চরাঞ্চলের চাষি কংগের আলী (৫৬) জানান, তিস্তার চরে জেগে উঠা ৪০ শতাংশ জমিতে গত বছর থেকে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আসছেন। এ বছর দুই হাজার টাকা খরচ করে ওই জমিতে তিনশত চারা রোপণ করেছেন। প্রতিটি গাছে ৫/৭টি কুমড়া ফলবে। স্থানীয় বাজার অনুপাতে প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া আকার ভেদে ৫০/১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ফলন ভাল হয়েছে আবহাওয়া ভাল থাকলে মুনাফা ভালই পাবেন বলে আশা করছেন চাষি কংগের আলী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় প্রতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা বা প্রদর্শনীর আওতায় বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কৃষকদের। কিন্তু সরকারি এ সুযোগ মূল ভু-খণ্ডের কৃষকরা পেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর চরাঞ্চলের চাষিরা। এমনটা অভিযোগ তোলেন মিলন বাজার চরের আব্দুল হাকিম।
তিনি জানান, প্রকৃতির সঙ্গে নিত্য লড়াই করে চরাঞ্চলের মানুষ চাষাবাদ করে। প্রতি বছর বন্যা, নদী ভাঙন ও খড়ার মত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে চাষাবাদ করেন। এসব কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা বা প্রদর্শনী তো দূরের কথা ফসলের ব্যাপারে পরামর্শ নিতেও কৃষি বিভাগের লোকদের চরে খুঁজে পাওয়া যায় না। কৃষিসহ সরকারি সব সেবা বিশেষ কোটায় চরাঞ্চলের লোকদের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের সমতা ফিরাতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৮
আরএ