ডিমের ঝুড়িতে এ বেগুন রাখলে যে কারো পক্ষে বলা মুশকিল হয়ে যায় কোনটি বেগুন আর কোনটি ডিম।
সবার কাছে প্রায় অপরিচিত এ বেগুনটির উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো ও পানামায় বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল্লাহ্ আল মামুন।
তিনি বলেন, আঞ্চলিকভাবে আণ্ডাবেগুন হিসেবে পরিচিত হলেও এ বেগুনের বৈজ্ঞানিক নাম ‘অবারজিন’ (Aubergine) বা ‘সোলানাম মেলনজেনা’ (solanum melongena)।
পাহাড়ি অঞ্চল নেত্রকোনার দুর্গাপুর চন্ডিগড় বাজারে সম্প্রতি দেখা মেলে আণ্ডাবেগুনের। পরিচিত লম্বা ও গোল বেগুনের চেয়েও ভর্তা, ভাজি আর কেটে কুচি কুচি করে আচার তৈরির জন্য অসাধারণ এ আণ্ডাবেগুন।
বাড়ির আঙিনাজুড়ে বীজ রোপণ করে দিলেই সারাবছর এ বেগুনের ফলন হয়। বর্ষাকালে চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা যায় বলেও জানান বিক্রেতা আব্দুল লতিফ। তিনি চন্ডিগড় ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় প্রতিদিন তিনি চন্ডিগড় বাজারে এসে আণ্ডাবেগুন বিক্রি করেন। এতে তার সংসারের টুকিটাকি খরচপাতির অর্থ জোগাড় হয়ে যায়।
লতিফ বাংলানিউজকে আরো জানান, বর্তমান বাজারে আণ্ডাবেগুন কেজি প্রতি ২৫/৩০ টাকা বিক্রি করলেও বর্ষাকালে চাহিদা বেশি থাকায় কেজিতে বিক্রি হয় ৭০/৮০ টাকা। বাড়ির আঙিনায় অল্প জায়গাতে উচ্চ ফলনশীল এ বেগুন চাষ করেও ছোটখাটো একটি পরিবারের খরচ চলতে পারে বলে লতিফের অভিমত। এই বেগুনে ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম হওয়ায় দরকার হয়না বাড়তি কোনো পরিচর্যা।
ময়মনসিংহ, ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে কৃষিবান্ধব রুচিশীল আধুনিক দু/একটি পরিবার শোভাবর্ধন ও খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য নিজ বাড়ির ছাদে আণ্ডাবেগুন লাগাতে শুরু করেছেন।
এমনই তথ্য জানিয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন বাংলানিউজকে বলেন, আণ্ডা বা ডিমবেগুনের একেকটি গাছে ৩০/৪০টি বেগুন হয়। প্রতিটি বেগুনের সর্বোচ্চ ওজন হয় ৬০-৭০ গ্রাম। নিজেদের খাবার জন্য বাড়ির ছাদে আমিও এ বেগুন চাষ করছি। এ জাতের বেগুন জমিতে চাষ করলে প্রতি একরে ৪০০-৪৫০ মণ ফলানো সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে আছে ০.৮ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১.৮ গ্রাম আমিষ। ৪২ ক্যালরি শক্তি। উচ্চমাত্রার ফাইবার আর কম দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিশেষ উপকারী। ফাইবার বেশি থাকায় রক্তে কোলেস্টেরল কমায় আর আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তশূন্যতা দূর করে আন্ডাবেগুন।
এতে রয়েছে এক ধরনের এসিড যা মানবদেহের রোগ জীবাণু ও টিউমারের বিরুদ্ধে ব্যাপক কাজ করে। বদহজম দূর করতে বেগুনটিতে রয়েছে আরো ভিটামিন এ, বি, সি, ই আঁশ জাতীয় খাদ্য উপাদান।
চন্ডিগড় গ্রামের বাসিন্দা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্র সুদীপ চন্দ্র পাল বেগুনটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, আন্ডাবেগুন খেতে অনেক মজাদার। বাজারে আণ্ডাবেগুন চোখে পড়লেই কিনে নেয়া হয় বাড়িতে। তবে সচরাচর পাওয়া যায় না এ বেগুন। বিক্রি করতে দু’একজন বাজারে নিয়ে আসেন তাও হঠাৎ।
মানব কল্যাণকামী অনাথালয়ের প্রধান সমন্বয়কারী কর্মকর্তা নাজমুল তুহিন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বাণিজ্যিকভাবে এ বেগুনটি কাউকে চাষ করতে দেখিনি এখনো। তবে প্রায়ই বাজারে দেখতে পাই কেউ কেউ বিক্রি করেন। সাধারণ বেগুনের চেয়ে আণ্ডাবেগুন খেতে অনেক মজা।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
আরএ