লিচুর পাশাপাশি আমগাছজুড়ে দেখা দিয়েছে থোকায় থোকায় মুকুল। বর্তমানে চারপাশের লিচু ও আমগাছের পাতা ঢাকা পড়েছে মুকুলের ভারে।
গতবছরের বন্যায় স্থানীয় কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও উপকার হয়েছে কৃষি জমির। দিনাজপুর জেলা দেশের প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন এলাকা হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আম-লিচুতে। বন্যার পানিতে ভেসে পলিমাটি জমাট বাধে। বন্যার পানিতে ভেসে আসা সেই জমে থাকা পলি মাটির (জমির) উর্বর শক্তি বাড়ায়। বন্যা পরর্বতী জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সব ধরনের ফলন হয় কয়েকগুণ। গতবছর বন্যায় জমে থাকা পলির কারণে জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে চলতি মৌসুমে আম-লিচুগাছে ব্যাপক মুকুল ধরেছে। যা ফুটে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে।
আম-লিচুগাছে ব্যাপক আকারে মুকুল দেখা দেওয়ার আগ থেকে ফলন ভালো পাওয়ার আশায় পরিচর্যা শুরু করেছেন স্থানীয় বাগানি ও চাষিরা। খড়া মৌসুমে বৃষ্টিপাত দেখা না দেওয়ায় সেচের মাধ্যমে লিচু-আমগাছের গড়ায় পানি সরবরাহ করছেন তারা। কোনো ধরনের ছত্রাক বা রোগে আক্রান্ত না হয় এজন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিচ্ছেন স্থানীয় লিচু-আম চাষিরা। আগামীতে ফলন উঠা পর্যন্ত গাছ ও ফলের পরিচর্যা কাজ চালিয়ে যাবেন তারা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ২ হাজার ৭০০ হেক্টর লিচু ও চার হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে জেলার আম ও লিচুগাছের শাখায় থোকায় থোকায় ঝুলছে ফুটন্ত মুকুল। তবে কিছু গাছের মুকুল থেকে এসেছে আমের ছোট গুটি।
দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বাজনাহার এলাকার আম ও লিচুচাষি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গতবছরের মতো চলতি মৌসুমে লিচুর মুকুল দেখা দিলেও আমের রেকর্ড পরিমানের মুকুল দেখা দিয়েছে। অন্যান্য মৌসুমে লিচুর একক দাপট থাকলেও এবার আমগাছে যে পরিমানের মুকুল ধরেছে তাতে সমান দাপটে রয়েছে লিচু-আম। গত দু’মাস থেকে লিচু ও আমগাছের পরিচর্যা করতে শুরু করি। মুকুলগুলো ফুটতে শুরু করেছে। কিছু আমগাছের ফুটন্ত মুকুল থেকে গুটিও বেরুচ্ছে। তবে ফুটন্ত মুকুল থেকে লিচু ও আমের গুটি পুরোপুরি বেরুতে আরও দু’সপ্তাহ লাগতে পারে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরিচর্যা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ফলন উঠা পর্যন্ত গাছের পরিচর্যা চালিয়ে যেতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, গতবছর বন্যার পানিতে পলি ভেসে আসায় জমির উর্বর শক্তি বেড়েছে। জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় সব ধরনের ফসলে সাধারণের তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হয়। এবার বন্যার প্রভাব আম-লিচুর ফলনেও বেড়েছে। মুকুল ধরা থেকে ফল আসা ও ফল উঠা পর্যন্ত সব ধরনের পরিচর্যা কাজে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করবেন। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবার দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমানে আম-লিচুর ফলন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
এএটি