ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শসার বাম্পার ফলনেও হাতবদলে ঠকছে চাষি

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৮
শসার বাম্পার ফলনেও হাতবদলে ঠকছে চাষি শসার স্তূপ করছেন এক ব্যবসায়ী। ছবি: অনিক খান/ বাংলানিউজ 

তারাকান্দা  ঘুরে: দিন-রাত পরিশ্রম আর মূলধন বিনিয়োগ করে শসা উৎপাদন করছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার চাষিরা। কিন্তু লাভ যাচ্ছে সব মধ্যস্বত্বভোগীর পেটে! ভোক্তারা ৩০ টাকায় প্রতিকেজি শসা কিনলেও চাষির পকেটে ঢুকছে মাত্র ৮-১০ টাকা।

হাতবদলে দাম তিনগুণ হলেও ঠকছেন মাঠের চাষি। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গোয়াতলা শসা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

এ উপজেলায় শসার বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষি।

তারাকান্দা উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ এগোলেই গোয়াতলা শসা বাজার। শসার ভরা মৌসুমে বাজারটি জমজমাট। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানকার চকনাপাড়া, গোয়াতলা, কাকনী, শিমুলিয়া, বারইপানাসহ বিভিন্ন গ্রামে ক্ষেত থেকে শসা তুলে মাঠে জড়ো করেন চাষিসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।  

অনেকেই আবার সরাসরি স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে নিয়ে আসছেন। মাপামাপির কাজ শেষ হতেই পানিতে ধুয়ে শসা বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। বিকেলে ট্রাক, পিকআপে করে এ শসা চলে যাচ্ছে ময়মনসিংহসহ বিভাগের বিভিন্ন বাজারে।  

পাইকার ও আড়তদারদের পদচারণায় গোয়াতলা বাজারটি সরগরম। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারটিতে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মণ শসা বিকিকিনি হয়।  

রোববার (০১ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় তারাকান্দা উপজেলার এ বাজারে বাংলানিউজকে পাইকারি বিক্রেতা এনামুল হক (৪০) বলেন, শসা বেশ সুস্বাদু সবজি। সালাদে শসার কদর যেমন রয়েছে তেমন পুষ্টিগুণেও এটি অনন্য। স্বল্প পুঁজি আর অল্প পরিশ্রম শসা চাষিদের সফলতার মন্ত্র।

তিনি জানান, চাষিদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে শসা কেনা হচ্ছে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে সেই শসাই বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে।  

তবে এনামুলেরও দাবি, বস্তা কেনা থেকে শুরু করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের পর লাভের অঙ্কটা খুব বেশি নয়।  

স্থানীয় ঢাকুয়া ইউনিয়নের বারইপানা গ্রামের আবুল কালাম (৪২) এবার দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলেও পয়সা পাচ্ছেন না তিনি।  

এ চাষি জানান, জমি তৈরি, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। মণপ্রতি ৩২০ টাকা আর কেজি হিসেবে ৮ টাকায় শসা বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। অথচ তার উৎপাদন খরচই পড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকার উপরে।   

একই রকম কথা জানান, অনন্তপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক (৫০), গোয়াতলার মোহাম্মদ ইসমাইল (৩৫), হাসিম উদ্দিন (৩২) ও একই এলাকার আতিকুল ইসলাম।  

তারা জানান, প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা লোকসানে শসা বিক্রি করতে হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা কেজিতে হাতিয়ে নিচ্ছে ১৫-২০ টাকা।  

এসব চাষিদের লাভের গুড় মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে যাওয়ায় হতাশার কথা জানিয়ে তারা বলেন, শসা চাষ এখন লাভজনক। কিন্তু চাষিদের রাত-দিন পরিশ্রম আর মূলধন খাটানো অর্থে উৎপাদিত এ সবজির লাভের টাকায় ফায়দা তুলছে অন্যরা। বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদার পুরো সুবিধাই নিচ্ছেন তারা।  

স্থানীয় গোয়াতলা শসা বাজারের এ চালচিত্র দেখার পর সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ শসা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।