ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সুবর্ণচরে কোটি টাকার তরমুজের ফলন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
সুবর্ণচরে কোটি টাকার তরমুজের ফলন বিশাল আকৃতির একটি তরমুজ নিয়ে ফসলের মাঠে কৃষকের ছেলে। ছবি: বাংলানিউজ

সুবর্ণচর থেকে ফিরে: ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। রোদটা বেশ তেঁতেই উঠেছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজুবিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ কচ্ছপিয়া গ্রামটি তখনও শান্ত সুনিবিড়।

গ্রামের রাস্তায় আর ফসলের মাঠে তখন কেবলই কৃষকের আনাগোনা। মাঠের অদূরে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।

কৃষক সলিম উল্লাহ মিয়া ট্রাক্টরের সাহায্যে খেত থেকে তরমুজ নিয়ে এসেছেন ট্রাকে বোঝাই করে দিতে। সুবর্ণচরে নিজের মাঠ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করছেন চাষি সলিমুল্লাহ।                                          ছবি: বাংলানিউজচলতি মৌসমে পুরো সুবর্ণচরেই তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে, তাই বেশ খোশ মেজাজেই আছেন কৃষকরা। শিলা বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ফলন যেমন ভালো তেমনি ন্যায্য দামও পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি মৌসুমে ৪ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছিলেন সলিম উল্লাহ মিয়া। বীজ, সার, চাষাবাদ, সেচ ও মজুরিসহ প্রায় ১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিলো তার। ইতোমধ্যেই তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন তিনি। মাঠে আরো প্রায় লাখ খানেক টাকার তরমুজ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সুবর্ণচরে তরমুজের বাম্পার ফলনের কথা জানালো স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসও। নোয়াখালী সদর উপজেলা ও সুবর্ণচরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে সুবর্ণচর উপজেলায় ৪ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ কোটি টাকার মতো মূল্যের তরমুজের ফলন হয়েছে। যা বিগত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি।

২০১৭ সালে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছিল ৪৫ লাখ টাকার তরমুজ। চলতি বছরে তরমুজের চাষাবাদ এবং ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলেও জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।

ফসলের মাঠে তরমুজ কিনতে আসা ব্যাপারী শাহজাহান মিয়া বলেন, সুবর্ণচরের তরমুজ অন্যান্য এলাকার তরমুজের চাইতে সুস্বাধু। তাই এই এলাকার তরমুজের চাহিদা রয়েছে বেশি। এখানকার তরমুজ নোয়াখালী ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারে বিক্রি হয়। বিক্রির জন্য গাড়িতে তোলার অপেক্ষায় জড়ো করা হয়েছে তরমুজ।  ছবি: বাংলানিউজউপজেলা কৃষি অফিসের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার চরজব্বর, চরজুবিলী, চরআমান ঊল্যাহ, চরবাটা, পূর্বচরবাটা, চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর ও চরওয়াপদাসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় এসব চরে বাম্পার ফলন হয়েছে তরমুজের।

তবে সামগ্রিকভাবে বাম্পার ফলন হলেও উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় তরমুজ ক্ষেতে অজানা রোগ দেখা দিয়েছিলো। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগও রোগ নির্ণয় করতে না পেরে নমুনা সংগ্রহ করে গাজীপুরের জয়দেবপুর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ল্যাবে পাঠিয়েছিলো।

চর ক্লার্কের কয়েকজন কৃষক জানান, কিছু ক্ষেতে হঠাৎ তরমুজ গাছ মরে যেতে শুরু করে। উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নে এবারই প্রথম তরমুজ চাষ হয়েছে, সেখানে গাছের পাতাগুলো প্রথমে কুঁকড়ে যাচ্ছিলো। এরপর বিবর্ণ হয়ে এক পর্যায়ে গাছ মরে গিয়েছিল।

অপরদিকে চরবাটা, চরজব্বার ও চরজুবিলী ইউনিয়নে টানা কয়েক মৌসুম তরমুজের আবাদ হচ্ছে। এসব ক্ষেতের গাছগুলোয় প্রথমে গোড়ায় পচন ধরে। এরপর ধীরে ধীরে ডগা থেকে কাণ্ড ও পাতা বিবর্ণ হয়ে নুয়ে পড়ে এক পর্যায়ে মরে যায়। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও ফল পাওয়া যায়নি। ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছিলো।

পরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে জানা গেছে, এটি গামোসিস ও ঢলেপড়া রোগ। কৃষি বিভাগের চার সদস্যের একটি গবেষক দল মাঠ পরিদর্শন শেষে এ তথ্য জানিয়েছিলো। দলটি সুবর্ণচর উপজেলার মোট ৭৮ একর তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে রোগটির ব্যাপারে নিশ্চিত হন। রোগ শনাক্তের পর ওষুধ দিলে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে। ফসলের মাঠে বসে তরমুজ খাচ্ছে চাষি সলিমুল্লাহ মিয়ার ছেলে।  ছবি: বাংলানিউজসুবর্ণচর উপজেলায় তরমুজ চাষাবাদের বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কৃষি বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পান না বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা। তারা বলছেন, কৃষকরা তাদের নিজস্ব ধারণার আলোকে চাষাবাদ করছেন। কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। সরবরাহ করা হয়নি বীজ ও সার। ব্যবস্থা করা হয়নি কৃষি ঋণের।

এদিকে নোয়াখালী সদর উপজেলা ও সুবর্ণচরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষকদের বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
এসএইচডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।