ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

জলাবদ্ধ ক্ষেতের ধান কাটতে শ্রমিক মেলা ভার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৮
জলাবদ্ধ ক্ষেতের ধান কাটতে শ্রমিক মেলা ভার পানির মধ্যে ধান কাটছেন কৃষকরা। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: আকাশ কখনও রৌদ্রজ্জ্বোল, আবার কখনও কালো মেঘে আচ্ছন্ন। মাঝে মধ্যে চলছে মেঘের তর্জন-গর্জন। কখনও ঝড়ো হাওয়া, আবার কখনও অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। আর বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে পাকা ধান ফেলে রেখে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা। ঘরে ধান তোলা নিয়ে তাদের কপাল জুড়ে এখন চিন্তার ভাঁজ। ভারী বর্ষণ আর উজানের পানিতে ডুবে যেতে বসেছে তাদের সোনালী স্বপ্ন।

কয়েকদিন ধরে শস্যভাণ্ডার খ্যাত নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিলে বিরাজ করছে এমন পরিস্থিতি। একদিকে পানিতে ডুবছে পাকা ধান, অন্যদিকে শ্রমিক সংকট।

সংখ্যায় নগণ্য শ্রমিক কাজ করতে রাজি হলেও কৃষককে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সঙ্গে পরিবহন সমস্যাসহ ভেজা ধান শুকানো নিয়েও রয়েছে বেশ দুর্ভোগ। ফলে এখানকার কৃষকরা আছেন উভয় সংকটে।

টানা কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে মাটিতে লুটিয়ে আধা পাকা বোরো ধান ভারী বর্ষণে ডুবে গেছে পানিতে। এছাড়া আত্রাই এবং নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকেছে। এতে এলাকার কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগাম বন্যার আশঙ্কায় তারা এখন আধা পাকা বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন। নৌকা, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িতে করে জমি থেকে ডাঙ্গায় তুলছেন এসব ধান।
ভারী বর্ষণে জমিতে নুয়ে পড়েছে ধান।  ছবি: বাংলানিউজ
সরেজমিন চলনবিলের সারদানগর, চৌগ্রাম, একশিংতাড়াই, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ী এবং হালতিবিলের পাটুল, বাঁশিলা, তেঘড়িয়া, খোলাবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।  

কৃষকরা জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান কেটে পাড়ে তুললেও সময় মতো বহন করতে পারছেন না তারা। ফলে এসব ধান পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

গত বছর আগাম বন্যায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার বাম্পার ফলনে তা পুষিয়ে যাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এবারও লাভের পরিবর্তে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন তারা।  

হালতিবিলের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, শতভাগ পাকা ধান ঝড়ের কবলে জমিতে নুয়ে পড়ায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এসব ধান কাটতে অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। সময় মতো ধানগুলো কাটতে না পারলে ক্ষেতেই নষ্ট হবে। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।  

তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম জানান, এ বিলের ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সরকারি খাল আছে। অথচ সে খাল দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় প্রতিবছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

চলনবিলের ডাহিয়া গ্রামের কৃষক খাজাবর রহমান জানান, সরকারি খাল দখল করে ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনের সব পথ বন্ধ রয়েছে। এতে দফায় দফায় ভারী বর্ষণের পানি জমে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িতে করে জমি থেকে ডাঙ্গায় তুলছেন ধান কৃষকরা।  ছবি: বাংলানিউজপাবনা থেকে আসা ধান কাটা কৃষি শ্রমিক বাবলু, শহিদ ও নাসের জানান, বর্তমানে ধান কাটতে তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে সময় ও পরিশ্রম দু’টোই বেশি লাগছে। মালিকের পানিতে ডোবা ধান ঘরে তুলতেও খরচ বেশি পড়ছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তার উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ শুয়ে পড়েছে। রোদ হলে জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি শুকিয়ে গেলে কিংবা পানি বৃদ্ধি না পেলে ধানের ক্ষতি হবে না। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এবার উপজেলায় মোট ৮ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সঠিক পরিচর্যায় বোরো ধানে রোগবালাই ছিল না এবং বাম্পার ফলন হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু ভারী বর্ষণে নিচু জমিতে পানি জমে গেছে। এতে ধান কাটতে কৃষকদের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।