এই কথাগুলো বলছিলেন বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের কিসমত ঘাটাবিল এলাকার কৃষক এমারুল হক (৫৫)।
কৃষি
কামলার অভাবে ধান কাটপ্যার পারোছো না
রংপুর: ‘কন কনা ঠাণ্ডাত আর শরীল পানি করি হামরা খালি ধান আবাদ করি, এমনিতে ধানোত বাবোদ তারপর হাড় ভাঙ্গা খাটুনি, অসময়ে পানিতে ধানের ক্ষতি, তার উপর ফির ধান কাটা মানুষ পাওয়া যাওছে না। ক্যাংকা করি হারা ধান আবাদ করমো’।
সরেজমিনে শুক্রবার (১১ মে) উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে পাকা ধানক্ষেত। সোনালি আভা ছড়াচ্ছে পাকা ধান ক্ষেতগুলো। কোথাও দেখা যায়, অসময়ের বৃষ্টিতে পাকা ধানক্ষেতে পানি জমে আছে, আবার কোথাও দেখা যায়, পানিতে ন্যুইয়ে পড়েছে পাকা ধান গাছ। এখন উপজেলার প্রতিটি জমির ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও শুধুমাত্র কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা তা কাটতে পারছেন না।
এনিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। এই হল রংপুর বদরগঞ্জের ধান কাটা নিয়ে শ্রমিক সংকটের চিত্র। কথা হয় গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বোর্ডেরহাট এলাকার কৃষক সাহাবুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি জানান, কয় দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে এমনিতেই ধানের ক্ষতি হয়েছে তার উপর বেশি মজুরি দিয়েও ধান কাটার জন্য মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। পাকা ধান নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় আছি।
তিনি আরও জানান, এমনিতেই এক বিঘা (৫২ শতাংশ) ধান ফলছে ৪০ মণ (১ মণ-২৮ কেজি)। এক বিঘা জমি আবাদ করতে খরচ হয়েছে সবমিলিয়ে ১৫ হাজার টাকারও বেশি। শ্রমিক সংকটের কারণে এখন এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে খরচ হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা।
এদিকে ধানের মণ ৫ শ টাকা। এখন বুঝেন, কৃষকের ধান আবাদ করে কতটুকু লাভ? কথা হয় রামনাথপুর ইউপির ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন প্রামাণিকের সঙ্গে।
তিনি জানান, আগে আমাদের এলাকায় ধান কাটার জন্য অনেক কৃষি শ্রমিক পাওয়া যেতো। এখন আর পাওয়া যায় না, কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের কিছু লোকজন দল বেঁধে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধান কাটতে যায় অধিক টাকা আয়ের জন্য। আর কিছু লোকজন ঢাকায় গার্মেন্টসসহ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই আমাদের এ এলাকায় কৃষি শ্রমিক সংকট।
তিনি আরও জানান, আমারও ৩০ বিঘা জমির পাকা ধান কৃষি শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছি না। ধান জমিতেই পড়ে আছে। জানি না কি হবে?
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭২৬০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১৭৩২৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক রায় জানান, অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমির ধান কাটা সম্পন্ন হলেও মজুর সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধান কাটা বিলম্বিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান মজুর সংকটের বিষয়ে জানান, দেশের নানা প্রান্তে আগাম ধান কাটা শুরু হওয়ার কারণে এ উপজেলার কৃষি শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকের এ সংকট।
তিনি আরও জানান, এছাড়াও এক ধরনের কৃষি শ্রমিক এখন আর কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তারা এখন অটোরিকশা, চার্জার ভ্যানসহ অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারা এখন আর রোদে পুড়ে ধান কাটতে চায় না। এটাও কৃষি শ্রমিক সংকটের অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
এএটি