এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বাড়তি লাভের আশায় সময়ের আগেই বাজারের ঝুড়িতে তুলেছে দেশি জাতের আধাপাকা লিচু। দাম বেশি, আকারে ছোটো আর স্বাদেও টক।
মহানগরীর সাহেববাজারে লিচুর পসরা সাজিয়েছেন আরিফ হোসেন। পাটের অর্ধেক চট দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। অর্ধেক রেখেছেন খোলা। মাথার ওপর প্রচণ্ড রোদ তাই চটের ওপর ঘন ঘন পানি ছিটাচ্ছেন। কাছে যেতেই বলে উঠলেন, রোদ-তো তাই ঝুড়ির লিচু শুকিয়ে যাচ্ছে। বেচাকেনা কম। ঘন ঘন পানি ছিটিয়ে বেশি সময় লিচু তাজা রাখার চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে আরিফ হোসেন বলেন, ৪/৫ দিন আগে থেকে বাজারে লিচু আসা শুরু হয়েছে। এগুলো দেশি জাতের গুটি লিচু। তাই আকারে ছোট, স্বাদেও টক। সময়ের আগে নয়, ঠিক সময়েই গাছ থেকে নামিয়েছি।
তবে লিচুর শরীর লালের বদলে সবুজাভ কেন প্রশ্ন করতেই মাথা ঘুরিয়ে মুচকি হাসি দেন আরিফ।
এমন হাসি দিয়ে শঠতা ঢাকতে ব্যর্থ হলেও আরিফের মতো অনেক ব্যবসায়ীই এখন বাড়তি লাভের আশায় রঙ না ধরতেই কাচা লিচু গাছ থেকে ভেঙে ঝুড়িতে তুলছেন। আর আকাশ ছোঁয়া দাম হাঁকছেন ক্রেতাদের কাছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বর্তমানে ১শ’ লিচু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে পুরোদমে লিচু উঠলে দাম কমবে।
গণকপাড়া এলাকার লিচু ব্যবসায়ী হায়দার আলী জানান, এখন সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামেই লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। মহানগরীর বড় বনগ্রাম ও ছোট বনগ্রাম এলাকায় বেশ কিছু লিচু বাগান রয়েছে। তাই প্রতি মৌসুমে তিনি স্থানীয় বাগান মালিকদের কাছ থেকে দেশি জাতের লিচু কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করেন। প্রথম ক'দিন ৪/৫ হাজার করে লিচু এনেছেন। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা কম। ক্রেতারা বেশ আগ্রহ নিয়েই লিচু দেখছেন। কিন্তু দাম শোনার পর বেশিরভাগ ক্রেতা পিছুটান দিচ্ছেন। তাই এখন ২/৩ হাজার করে আনছেন এবং ২/৩ দিন রেখে বিক্রি করছেন।
কথা হয় সাইফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, এখনকার লিচু মোটেও মিষ্টি নয়। এতটাই টক যে, বাচ্চারও খেতে পছন্দ করছে না। আকারে ছোট। এর ওপর লিচুর ভেতরেও পোকা। গত বৃহস্পতিবার ৩৫০ টাকা দিয়ে ১শ’ লিচু বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু টক হওয়ায় কেউ ভালো করে খেতে পারেনি। তাই পুরদমে লিচু না ওঠা পর্যন্ত আর লিচু কিনবো না।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বললেন, বাজারে এখন দেশি জাতের লিচু এসেছে। মে মাসের ১৫ তারিখের পর আগাম জাতের রাবি-১ লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। এরপর আসবে বারি-২ ও বারি-৩। বারি জাতের লিচু এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে পেকে যায়। এসব জাতের লিচু থাকবে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরইমধ্যে বোম্বাই, চায়না-৩, কাদমি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়িসহ অন্য জাতের লিচু আসবে। সব মিলিয়ে লিচু বাজারে থাকবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে রোদের তীব্রতা থাকলে লিচু তাড়াতাড়ি পাকতে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, গত ৪/৫ বছরে জেলায় লিচু চাষের পরিমাণ বেড়েছে। কেবল আম ও লিচুর চাষ করেই বছর জুড়ে স্বচ্ছল থাকছেন অধিকাংশ কৃষক। তাই ধীরে ধীরে লিচু চাষেও কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। লিচু চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে ওঠায় এবার লিচুতেও নিরব বিপ্লব ঘটতে চলেছে। বর্তমানে রাজশাহী জেলার ৪৭৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচুর বাগান রয়েছে।
তিনি বলেন, ছোট-বড় মিলিয়ে এখন জেলায় লিচু বাগানের সংখ্যা ৯০টিরও বেশি। এবার প্রতি কেজিতে গড়ে ২০ লিচু ধরে চার টনেরও বেশি লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এখন কেবল তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ভয়। তবে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৮
এসএস/আরআর