আকাশে মেঘের গর্জন শুনে অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামলেই ফাঁকা হয়ে যায় ফসলের ক্ষেত। বজ্রপাতের ভয়ে মাঠে ফসল ফেলেই চলে যান ক্ষেতমজুররা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৪৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। সবজির আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে সবজি চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ফেরাজিপাড়া এলাকার ধানচাষি ওয়াহাব মিয়া জানান, দুই বিঘা জমির ধানের ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার। প্রতি বছরের মতো ধানের ফলন এবারও ভালো হয়েছিলো। তবে চলমান বৃষ্টিতে পাকা ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমি থেকে এখনও সব ধান তুলতে না পারায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওয়াহাব মিয়া।
একই উপজেলার ধানকোড়া এলাকার ধানচাষি আব্দুস সালাম মিয়া জানান, জমি থেকে ধান সংগ্রহের জন্যে চারজন কৃষি শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রতিদিন জনপ্রতি ওই কৃষি শ্রমিকের জন্যে সাড়ে ৬’শ টাকা করে গুণতে হচ্ছে তাকে। তবে টানা বৃষ্টির কারণে তার অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলেই বজ্রপাতের ভয়ে শ্রমিকরা জমি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ায় ধান সংগ্রহে দেরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দুই বিঘা জমিতে ঢেঁড়শের আবাদ করেছেন চরধানকোড়া এলাকার সজবি চাষি ফরহাদ হোসেন। ফলনও বেশ ভালো। তবে বৃষ্টিতে বাজারজাত উপযোগী ঢেঁড়শ জমি থেকে সংগ্রহ করতে দেরি হচ্ছে তার। প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি শ্রমিকেরও। অতিবৃষ্টিতে বেশ কিছু ঢেঁড়শের গাছ মরে যাচ্ছে। আর বজ্রপাতের ভয়ে বৃষ্টির সময়ে কৃষি শ্রমিকেরা ক্ষেত খামারে কাজ করতেও চায় না বলে জানান ফরহাদ।
শিবালয়ের সাহেলী গ্রামের আলতাফ হোসেন জানান, পৃথক দুটি জমিতে দুই বিঘা মরিচের আবাদ করেছেন তিনি। বৃষ্টির কারণে এক বিঘা জমির মরিচ গাছ মরে গেছে। আরেক বিঘা জমি থেকে মরিচ তোলার শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ধান কাঁটা শ্রমিকের বেশি বাজারদর থাকায় অল্প টাকায় কেউ মরিচ তুলতে চাইছে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঘন ঘন বৃষ্টিতে ধানচাষিদের চেয়ে সবজিচাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৫ হেক্টর জমির মরিচ গাছ মরে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মরিচ চাষিরা।
কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানান, অতিমাত্রায় বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর ও ঠাণ্ডা কাশি হতে পারে। আর বৃষ্টির সময়ে বজ্রপাতের হাত থেকে রেহাই পেতে ক্ষেত খামারের কাজ থেকে বিরত থেকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়াই উত্তম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
কেএসএইচ/এমজেএফ