এদিকে বাড়িঘর হারা বন্যা কবলিত কৃষকদের মধ্যে আমন ধান চাষ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্যার পানি হাওরের নামায় আসন্ন আমন চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৯ হাজার ৪৪০ হেক্টর আউশধান চাষ করা হয়। কিন্তু চলমান বন্যার কবলে চার হাজার ৪৫০ হেক্টর ধানক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে জেলার কুলাউড়া উপজেলায় এক হাজার ৪৬০, রাজনগরে ৯০৬, কমলগঞ্জ ৮০০, সদর ১৯৫ ও জুড়ি উপজেলায় ৬০ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে দুদিনের মধ্যে পানি নেমে যাওয়ায় জুড়ি উপজেলার কিছু এলাকার ফসল রক্ষা পেয়েছে।
এছাড়া জেলাজুড়ে ১৬০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি খেত বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এখনো প্রায় ৪৫ হেক্টর সবজি পানিতে তলিয়ে রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
শুক্রবার (২২ জুন) সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে সৃষ্ট স্রোতে আউশ ধানের খেত লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ধানের চারার মাঝখানে ভেঙে পানিতে পড়ে আছে। অনেক জমিতে আবার ধানের কোনো অস্তিত্ব নেই। পানি সব ভাসিয়ে নিয়েছে। এছাড়া আমন চাষের জন্য প্রস্তুত বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় পানি নেমে যাওয়াতে কৃষকরা আবার বীজতলা তৈরির করেছেন। অনেকে আবার আমনের জন্য হালচাষ শুরু করে দিয়েছেন।
সদর উপজেলার মাতারকাপন এলাকায় এলাকার কৃষক ছমির আলী বাংলানিউজকে বলেন, চার বিঘা জমিতে আউশ লাগিয়ে ছিলেন। বন্যার পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সরকারি বীজ রোপণ করায় আশা করেছিলেন এই ধান তুলে আমন রোপণের যে খরচ হবে তা বহন করা যাবে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। এখন ঋণ করে আমন চাষ করতে হবে।
একই এলাকার কৃষক তরাজ মিয়া বলেন, বন্যায় আউশ নষ্ট হয়ে যাওয়াতে ঋণ করে তাড়াতাড়ি আমন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছি। কিন্তু আবার বন্যা আসলে শেষ আশাও ভাসিয়ে দিতে পারে। এখনো বর্ষার সময় রয়ে গেছে।
তবে বন্যায় বাড়িঘর হারানো কৃষকদের মধ্যে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। সবাই মাথা গুজার জায়গা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠে স্বপ্নের আউশ নষ্ট করে দিয়েছে বন্যার পানি, তাতে কোনো মনযোগ নেই তাদের।
রাজনগর উপজেলার মনসুরগর ইউনিয়নের কদমহাটা এলাকার কৃষক শাহীন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ১২ বিঘা আউশ ধান করেছিলেন, যার সবটুকু পানিতে ভেসে গেছে। ঢলের পানি ঘর ভেঙে মালামাল নিয়ে গেছে। আউশ তো হারালাম কিন্তু আমনের যে বীজ ছিলো তাও ঘরের মালামালের সঙ্গে পানি ভাসিয়ে নিয়েছে। ঘর মেরামতের টাকা নেই আর ধান চাষ করব কিভাবে?
কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, বীজতলার সব বীজ পানি ভাসিয়ে নিয়েছে। বন্যায় আশপাশ এখনো প্লাবিত। এখনো ঘরবাড়িতে উঠতে পারিনি। পরিবার নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। ঘরবাড়ি ঠিক করব কিভাবে সে চিন্তায় আছি। আগে মাথা গুজার জায়গা তৈরি করি তারপর কৃষিকাজ নিয়ে ভাবা যাবে।
একই অবস্থা রাজনগর উপজেলার আকুয়া, কামারচাক, কোণাগাওঁ, মহলালসহ তিন ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত কৃষকদের। ঘরবাড়ি মেরামত করে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগায় আমন চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। কৃষি নির্ভর মানুষ হালচাষ না করলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। যার ফলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
এদিকে বাঁধ ভেঙে ও উজানের ঢলের পানি এসে হাওরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। যার ফলে এবারও হাওরের কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর এলাকায় অবস্থিত কাউয়াদিঘি হাওরে ৭.৯ মিটার জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকরা বোরো চাষ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। একইভাবে হাকালুকি হাওরেও পানি বাড়ছে বলে জানা যায়। এতে করে হাওরে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী দুই এক দিনের মধ্যে পানি কমে গেলে তলিয়ে যাওয়া ফসল কিছুটা রক্ষা পাবে। তবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রায় খুব বেশি ব্যাঘাত হবে না। হাওরে পানি জমলে তা বোরো চাষের মৌসুম আসার আগেই আশা করছি পানি নেমে যাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৮
জিপি