পড়ুন বাংলানিউজের বর্ষপূর্তির ই-ম্যাগ
সমতলের সেই চা-বাগানের হাওয়া দেরিতে হলেও লেগেছে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলায়। টিলা বা পাহাড়ের চা-বাগানের যেমন সৌন্দর্য রয়েছে, তেমন অন্যরকম সৌন্দর্য রয়েছে সমতলের বাগানে।
পথে দেখা মেলে সমতলের চা-বাগান। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রবিউল হোসেনের তত্ত্বাবধানে সীমান্তঘেঁষা উপজেলা তেঁতুলিয়ায় লাগে সেই ছোঁয়া। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় চা চাষ। আর বাণিজ্যিক রূপ লাভ করে ২০০০ সালের দিকে।
তেঁতুলিয়ায় সফলতার পর পঞ্চগড়ের বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে বিস্তার লাভ করেছে চা-বাগান। অর্থকরী ফসল সবুজ চায়ের আবাদে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। সিলেট কিংবা চট্টগ্রামে উঁচু-নিচু ভূমি থাকলেও এখানকার সব বাগান একেবারেই সমতল। সমতলের এ চায়ের সফলতা প্রভাব ফেলেছে গোটা দেশের চা-শিল্পে। স্বাদেও অতুলনীয় পঞ্চগড়ের চা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।
তন্দ্রাচ্ছন্নতা ও ক্লান্তি দূর করার এক অনন্য পানীয় হচ্ছে চা। এরই মধ্যে দেশের তৃতীয় চা-অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়। এক সময়ের পতিত গো-চারণভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় পরিপূর্ণ। দেশের বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে পঞ্চগড়ের চা। চা-বোর্ড ‘স্ট্রাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর টি ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ ভিশন-২০২১’ প্রকল্প গ্রহণ করায় এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে চা উৎপাদনের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই ভিশন অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে চায়ের উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) কেজিতে উন্নীত হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্র চা চাষিদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের মাটি পরিত্যক্ত থাকতো বছরের পর বছর। পতিত জমি ব্যবহার করা হতো গো-চারণভূমি হিসেবে। অথচ এই পতিত জমির পাশেই সীমান্তের ওপারে একই জমিতে চা চাষ করতো ভারতীয়তা। তা দেখে চা চাষে আগ্রহ বাড়ে তেঁতুলিয়ার মানুষের। মাত্র ক’বছরেই তেঁতুলিয়া উপজেলার বিশাল গো-চারণভূমি চায়ের সবুজ পাতায় ভরে যায়।
চা বোর্ডের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় এগিয়ে আসেন স্থানীয় ক্ষুদ্র চা ব্যবসায়ীরা। বাগান মালিকদের পাশাপাশি তারাও চাষ করতে শুরু করেন চা। পঞ্চগড়ে নীরবে ঘটে যায় চা চাষের বিপ্লব। প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই চা বাগানে। আগে যেখানে নারীরা ঘর থেকে বের হতো না, সেই নারীরাই এখন চা-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। জেলায় চা চাষ হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নয় মাসের আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। হয়েছে স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও। ফলে এই এলাকার জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।
বাগানগুলোকে কেন্দ্র করে আশপাশে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া চা-বাগান দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পঞ্চগড়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। এতে জেলার আগের চিত্র পাল্টে গেছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। জীবনযাত্রার মানে এসেছে পরিবর্তন।
তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাগান গুচ্ছগ্রামের চা শ্রমিক আব্বাস আলী বাংলানিউজকে বলেন, চা পাতা সংগ্রহ করার মজুরি হিসেবে কেজিপ্রতি আমরা ৩ টাকা পাই। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করে মজুরি পাচ্ছি ৪শ থেকে ৫শ টাকা।
বাংলাদেশ চা বোর্ড, পঞ্চগড়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ শামীম আল-মামুন বাংলানিউজকে জানান, পঞ্চগড় জেলায় ৫ হাজার ১৯৯.৭৯ একর জমি চা চাষের আওতায় রয়েছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ছোট চা-বাগান ৬৬২টি, অনিবন্ধিত প্রায় ৩ হাজার ৫শ। নিবন্ধিত বড় চা-বাগান ৭টি ও অনিবন্ধিত বড় চা-বাগান ১৮টি।
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালে তৈরি চা উৎপাদন হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪৬ লাখ কেজি। চলতি বছর প্রায় ৭০ লাখ কেজি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। পঞ্চগড়ে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার সংখ্যা ২১টি। তবে বর্তমানে চালু রয়েছে ১২টি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৮