ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শার্শায় ২৬ শ’ খামারে গরু মোটা তাজাকরণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
 শার্শায় ২৬ শ’ খামারে গরু মোটা তাজাকরণ খামারের গরু। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় এখন যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চল শার্শার বিভিন্ন গ্রামে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ২৬শ’ গবাদি পশু খামার গড়ে উঠেছে। সেখানে কর্মস্থান হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বেকার যুবকের। তবে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহযোগিতা না পাওয়ায় নানান অভিযোগ রয়েছে খামার বিক্রেতাদের।

খামারগুলো ঘুরে দেখা যায় গরুর মাথার ওপর ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা আর পায়ের নিচে কার্পেট বিছানো। খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুষম খাদ্য।

গরুকে গোসল করাচ্ছেন দুই শ্রমিক।  ছবি: বাংলানিউজসার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরিচর্যা। ২৪ঘণ্টা এমন নিবিড় পর্যবেক্ষণে গরুগুলোর চেহারা এতো মায়াবী ও সুন্দর হয়েছে দেখলে মনে হবে এ যেন মাতৃস্নেনে লালন পালন।

উল্লেখযোগ্য খামারগুলো- বেনাপোল সীমান্তের পুটখালীর নাসির ও জসিমের খামার, দৌলতপুর গ্রামের হৃদয় পশু ফার্ম। ভারতের  রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাট, উলবেড়িয়া অন্ধপ্রদেশ ও আন্ধরা প্রজাতের গরু দেখা যায় খামারগুলোতে।

নাসিরের গরু মোটা তাজাকরণ খামারের বয়স সাত বছর।   প্রথমে স্বল্পতার মধ্যে খামারটি শুরু হলেও এখন সার্বক্ষণিক সেখানে পাওয়া যাবে উন্নত জাতের দুই শতাধিক গরু। ২০ জন কর্মচারী পরিচর্যা কাজ করছে খামারটিতে। খামারের প্রতিটি গরুর বাজার মূল্য সর্বনিম্ন ৩ লাখ উর্ধ্বে ৭ লাখ। এক একটির ওজন ২০ থেকে ২২ মণ। বলা যায় বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় গরু খামার এটি।

হৃদয় পশু ফার্মের বয়স তিন বছর। এখানে গরু রয়েছে দেড় শতাধিক। খামার মালিক নাসির বাংলানিউজকে জানান, ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় এখন তিনি এই খামার ব্যবসায় জোর দিয়েছেন। বর্তমানে তার দু’টি খামার রয়েছে। সন্তানের মতো খেয়াল রেখে খামারে গরু লালন পালন করেন। এ কারণে তার খামারে গরু সুস্থ ও বাজারে চাহিদাও ভালো। কিছু ভারতীয় গরু আর গ্রামগঞ্জ থেকে গরু সংগ্রহ করেন। পরে ৫ থেকে ৬ মাস ধরে নিজ খামারে যত্ন নিয়ে তা বাইরের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। কোরবানি উপলক্ষে গত এক সপ্তাহে তার খামারের শতাধিক গরু দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেছেন। এতে তার ভালোই লাভ হয়েছে।

এদিকে খামারি গরু বিক্রেতাদের অভিযোগ, অনেক সময় গরু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। স্থানীয় পশু চিকিৎসকরা যখন রোগ ধরতে না পারেন। তখন পশু সম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জানানো হয়। কিন্তু তারা আসতে চাই না। এতে বিভিন্ন সমস্যা পড়তে হয়।  

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়দেব সিংহ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার অধীনে ১১টি ইউনিয়নে গরু মোটা তাজাকরণের ২৬শ’টি খামার রয়েছে। সেখানে ১৮ হাজার গরু আছে। তার জানা মতে, পুটখালীর নাসিরের গরু খামারটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় গরু খামার। গতবার খামারের সংখ্যা ছিল ১৬শ। গরু মোটা তাজাকরণ পেশা খুব লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের।

খামার ব্যবসায়ীদের সেবা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য তার চাহিদার ১২ জন জনবলের জায়গায় রয়েছ মাত্র একজন। এ কারণে লোক সংকটে প্রয়োজন মতো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, ছয়মাস আগেও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে কম-বেশি গরু আসতো। কিন্তু সীমান্তরক্ষী বিএসএফের কড়া-কড়িতে এখন তার পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে আগে যে গরুর দর ৫০ হাজার ছিল এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে কোরবানি দিতে সমস্যায় পড়ছেন। এছাড়া দিন দিন সীমান্তে যেভাবে কড়াকড়ি আরোপ হচ্ছে। তাতে গরু আসারও সম্ভবনাও কম। দেশের গবাদি পশুর খামারগুলোতে যদি বেশি বেশি করে গরু পালন করা হয় তাহলে এই সংকট থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব। এতে দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হবে বলে জানান তারা।

 বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।