হাটগুলোতে ছাউনির ব্যবস্থা না থাকায় ভাদ্রের প্রচণ্ড রোদ ও ভ্যাপসা গরমে হাঁস-ফাঁস করছে ব্যবসায়ী ও কোরবানির পশু। এ অবস্থায় বৃষ্টির দেখা না মিললে বাড়বে বিড়ম্বনা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার উত্তরা উপশহরের একমাত্র অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসেছে ১২ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন ব্রিজ দিয়ে ১৫ নম্বর সেক্টর ও দিয়াবাড়ি খালপাড় সড়কে। এটি রাজধানীর অন্যতম বড় পশুর হাট। এরই মধ্যে এখানে আসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন জেলার গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ।
এই আবাসিক এলাকা ও সড়ক নতুন হওয়ায় এখানে কোথাও গাছ বা ছায়া নেই। রাস্তা ও খালি প্লটের ওপর বালু ফেলে করা হয়েছে হাটের ব্যবস্থা। সেখানে বাঁশ পুঁতে ও পলিথিনের তাবু খাটিয়ে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ব্যাপারীদের পক্ষ থেকে। তবে, ওই তাবুতে রোদের দাপট থেকে রেহাই মিলছে না। বিশেষ করে গরুগুলোর প্রাণ হাঁসফাঁস অবস্থা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নুরুল আমিন তালপাখা দিয়ে বড় সাইজের একটি শংকর জাতের গরুকে বাতাস করছেন। গরুটি কখনও মাটিতে মাথা রাখছে, কখনও তুলছে। ব্যাপারী হাতপাখা দিয়ে বাতাস করলেও গরুটি যেনো শান্তি পাচ্ছে না।
নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলছিলেন, গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে তার পাঁচ লাখ টাকা দামের গরুটি। এই গরমে কুষ্টিয়া থেকে লালন শাহ সেতু ও বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে টাঙ্গাইল হয়ে আসতে প্রায় ২০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। তার ওপর সকালে হাটে নামার পর থেকে খোলা আকাশের নিচে রোদে থাকায় কাহিল হয়ে পড়ছে গরুগুলো।
তিনি জানান, বড় গরুর জন্য সাধারণত ছায়াযুক্ত শুষ্ক ঠাণ্ডা স্থানে খামার তৈরি করেন তারা। কারণ, গরুগুলোকে মোটাতাজা করার জন্য বিশেষ করে ভুট্টা ভাঙ্গা, গমের ভুষি ও তুলার খৈল খাবার খাওয়ানো হয়। এসব খাওয়ালে গরু প্রাকৃতিকভাবেই মোটা হয় এবং চর্বি তৈরি হয়। চর্বি থাকায় এইসব গরুর শরীর অনেক গরম। এজন্য তারা রোদ বা গরম সহ্য করতে পারে না। পলিথিন টানিয়ে তাবু তৈরি করেও এমন গরম থেকে গরুগুলোকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এমন অবস্থায় গরুর শরীরে ঠাণ্ডা পানি ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন পশু চিকিৎসকরা। হাট ঘুরে দেখা গেলো, বেশির ভাগ ব্যাপারীই এই পরামর্শ মেনে চলছেন। অনেককে দেখা গেলো, গরমে শুয়ে পড়া গরুগুলোকে শোয়া থেকে তুলে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করাচ্ছেন তারা। কেউ বা গরুগুলোর শরীরে ঠাণ্ডা পানি ছিটাচ্ছেন।
কেবল গরুগুলোই নয়, গরমে কাহিল হয়ে পড়ছেন, দূর-দূরান্ত থেকে হাটে আসা ব্যাপারীরাও। এমনই একজন আব্দুল মালেক। গাইবান্ধার বোনারপাড়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন উত্তরায়। হাটে যাওয়ার আগেই উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরে ট্রাক থামিয়ে আব্দুল মালেককে সুস্থ করা চেষ্টা করছেন তার সঙ্গীর ও ট্রাকচালক।
গরমে অসুস্থ আব্দুল মালেকের ভাগ্নে মুকুল বাংলানিউজকে জানান, গরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন তার মামা। তার মাথায় পানি দেওয়ার পর জ্ঞান ফিরেছে। তবে শক্তি পাচ্ছেন না। তাই ওরস্যালাইন খাওয়ানো হচ্ছে। ট্রাকে আসতে গিয়ে, বিভিন্ন স্থানে গরমে রাস্তায় আটকে থেকে সবার অবস্থা এখন প্রায় একই।
এদিকে, এমন গরমের মধ্যে গরু নিয়ে ব্যাপারীরা হাটে এলেও, এখনও হাটমুখো হচ্ছেন না ক্রেতারা।
ব্যাপারীরা বলছেন, ক্রেতারা গরু কিনে নিলে গরুগুলো আরামে থাকতো। যত্নে থাকতো। কিন্তু গরমে থেকে গরুগুলো খুব কষ্ট পাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি থেকে ১৪টি মাঝারি আকৃতির গরু নিয়ে দুইদিন ধরে হাটে এসেছেন মোহাম্মদ আলি।
তিনি বলেন, আগেভাগে হাটে এসেছি, আগেভাগে বাড়ি ফিরবো বলে, কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। রোববার (১৯ আগস্ট) থেকে কেনা বেচা শুরু হতে পারে। তবে, সকাল ৮টা থেকে রোদের যে তাপ থাকে, তা চলে বলতে গেলে সূর্য ডোবা পর্যন্ত। এই তাপদাহের মধ্যে মানুষ বের হতে চায় না। তবে সময় যখন এগিয়ে আসবে তখন মানুষ বাধ্য হয়েই হাটে আসবে। ততোদিন গরুগুলো বেঁচে থাকবে কি না সেটাই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
আরএম/এসআই