দারিদ্র যখন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছিল না, ঠিক তখনই এই গ্রামেরই এক দরিদ্র চাষি আমীর উদ্দীন কচুর লতি বাজারজাত করতে শুরু করে লাভবান হন। তিনি মারা গেছেন অনেকদিন হলো।
এই সবজিটি একদিকে যেমন লাভজনক, অন্যদিকে অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু হওয়ায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এর চাষাবাদ। ভাগ্য ফিরতে শুরু করে পাটাবুকা গ্রামসহ আশপাশের কেশবপুর, পশ্চিম বালিঘাটা, সুইচগেট পাড়া, ধরঞ্জীসহ সমগ্র উপজেলার কৃষকদের। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পাঁচবিবি উপজেলার পাশাপাশি জয়পুরহাট সদর, দিনাজপুরের বিরামপুর, নওগাঁর বদলগাঁছী ও যশোর জেলাসহ অন্যান্য কিছু জেলা-উপজেলার কৃষকরাও বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষাবাদ শুরু করেছেন।
পাঁচবিবির কচুর লতি জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে আমেরিকা, ব্রিটেন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় ২৫টি দেশে। ফলে এই অর্থকরী ফসল থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে, যা স্থানীয় কৃষকদের দারিদ্র বিমোচনের পাশাপাশি অবদান রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে।
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ করতে হয় ২৩ হাজার টাকা। তবে জমি যদি লিজ নেওয়া হয় তাহলে এর খরচ বাড়ে আরো চার হাজার টাকা। পাঁচ-ছয় মাস পর ওই জমি থেকে ৭৫ মণ লতি পাওয়া যায়। যার দাম প্রায় ৬৪ হাজার টাকা। এতে করে খরচ বাদে লাভ থাকে ৩৫ হাজার টাকা। পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের পাটাবুকা গ্রামের সফল লতি চাষি আফজাল হোসেন, গৌর গোপাল, বালিঘাটার আনিছুর, মিজান, সুইচ গেট পাড়ার আব্দুল মজিদ, রাজু, আব্দুল মান্নান, শহিদুল, বড় নারায়ণ পাড়ার মোশারফ হোসেনসহ অনেক কৃষক জানান, কচুর লতি চাষ অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় তাদের অর্থকষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়েছে।
পাঁচবিবি পৌরসভার লতির পাইকার ক্রেতা নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামীম, আবু তালেব, রুবেল, সবুজ, শাহজাহান, সুজাউল, আমীর হোসেনসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লতির মৌসুমে (আষাঢ, শ্রাবণ ও ভাদ্র) প্রতিদিন পাঁচ-সাত ট্রাক লতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ যাত্রাবাড়ী, চৌরাস্তা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টাঙ্গাইল, দৌলতপুর, রাজশাহী, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগর, বোদা, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কচুর লতি মোটা, মাঝারি ও সরু হয়ে থাকে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হওয়া কচুর লতি শুধু কৃষকদের ভাগ্যই পরিবর্তন করেনি, করেছে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থান। লতির মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ’ এবং অন্যান্য সময়ে প্রায় দুইশ’ শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, এবার ৯৫০ হেক্টর জমিতে কচুর লতির চাষ হয়েছে। প্রতি বছরই এর চাষ বাড়ছে। বছরের যে কোনো সময় এর চাষ শুরু করা যেতে। এ উপজেলায় কচুর লতি রপ্তানির জন্য রপ্তানি প্রক্রিয়া জোন করার প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তবে জয়পুরহাটে উৎপাদিত কচুর লতি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়া সরকারের নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতা, নেই লতি বিক্রির স্থায়ী কোনো হাট-বাজার। অভিযোগ রয়েছে-এখানে অস্থায়ী একটি বাজার গড়ে উঠলেও তা পাইকার ও স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকায় কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন নায্য মূল্য থেকে।
পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে জানান, কৃষকদের দূরে আসতে অনীহা, যেখানে সেখানে লতি বাজারজাত করা এবং জায়গার সংকট- এ তিনটি কারণে মূলত এখনও লতির জন্য এখানে স্থায়ী কোনো বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই পৌরসভার উদ্যোগে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৮
এসআই