পাশে থাকা বর শিহাব তার ভুল শুধরিয়ে বলে দিলেন- আরে মূলা কি গাছে ধরে? এটা বেগুন। তারপর তিনজনই হাসতে হাসতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
গাছটির কাছে গিয়ে বোঝা গেল-সত্যিই ধন্দে লাগার মতো। সাদা বেগুন, তাও আবার লম্বায় ২০ সেন্টিমিটারের মতো। হঠাৎ দেখলে যে কারোরই একে মূলা বুঝে নিতে সময় লাগবে না, যদি না গাছের দিকে ভালো করে তাকানো হয়।
রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত জাতীয় সবজি মেলার দ্বিতীয় দিনে গিয়ে এই বেগুনের খোঁজ পাওয়া গেল। গবেষণা করে লম্বা সাদা বেগুনের জাতটি উদ্ভাবন করেছে লাল তীর সিড লিমিটেড নামের বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
অবন্তিরা চলে যাওয়ার পর লাল তীরের স্টলেই সময় কাটল বেশ কিছুক্ষণ। যারা আসছেন, দেখা গেল প্রায় সবাই ঘুরেফিরে সেই বেগুন গাছটির কাছে ভিড়ছেন। আর বিস্ময়ের স্বাদ নিয়ে যাচ্ছেন স্টল থেকে স্টলে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে এক সময় বেশ চাষ হতো সাদা বেগুন। তবে সেটি ছিলো আকারে ছোট। দেখতে অনেকটা ডিমের মতো। তাই কোথাও একে আন্ডা বেগুন, কোথাও ডিম্ব বেগুন, কোথাও আবার ডিম বেগুন এমন নামে ডাকা হতো।
হাইব্রিড বিভিন্ন জাতের গোল বা লম্বা বেগুনের ভিড়ে ছোট বেগুনের চাষই এখন হয় না, আর তো ডিম্ব বেগুন। তবে ছোট বেগুন এবং ডিম্ব বেগুন এখনও কেউ কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করেন। তবে সেটা কেবলই নিজের খাওয়ার জন্য। ছোট বেগুন কিংবা এই ডিম্ব বেগুন ভর্তা বা শুঁটকি কিংবা ছোট মাছের সঙ্গে খেতে বেশ স্বাদের।
প্রায় হারিয়ে যাওয়া ছোট আকারের এই সাদা বেগুনের সঙ্গে মেক্সিকোর লম্বা জাতের সাদা বেগুনের জাতের সংকরায়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশের উপযোগী করে নতুন এই জাতটির উদ্ভাবন করেছে লাল তীর সিড লিমিটেড। নতুন জাতটি এখনো বাজারজাত করা হয়নি। শিগগিরই বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। লম্বা জাতের মূলার মতো দেখতে সাদা বেগুনের একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ৬০টির মতো বেগুন পাওয়া যায়। প্রতিটির আকার লম্বায় ১৮ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হয়। কেবল শীতকালেই এটি হয়। বিচি খুব কম হওয়ায়, বেগুনটির স্বাদও দারুণ।
তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া ছাড়াও এই বেগুনের অন্য একটি ভোজ্যক্ষেত্র রয়েছে। আর সেট হলো আচার। এই বেগুনের আচার বলতে গেলে অতুলনীয়। রান্নার করে খাওয়ার চেয়ে এই বেগুনের স্বাদ আচারেই বেশি। গবেষকরা বলছেন, বাজারজাত করা হলে ধারণাগত পরিবর্তন আনবে যে, বেগুনের আচারও বেশ স্বাদের হয়।
লাল তীরের গবেষক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্লান্ট ব্রিডার মো. লুৎফুল কবীর বাংলানিউজকে বলেন, সাদা জাতের লম্বা বেগুনটি বাজারে শিগগিরই আসবে। এটি মানুষের কেমন চাহিদা পায়, সেটিই দেখার বিষয়। বাজারে এলে প্রতিকেজি বিজের দাম ১শ’ টাকার মতো হতে পারে।
সবজি মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নানা জাতের ও বৈশিষ্ট্যের বীজ নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের স্টল সাজিয়েছে। এছাড়া অনেক কৃষি ফার্মও এসেছে তাদের উৎপাদিত নানা নানা জাতের সবজি নিয়ে। এসেছে কীটনাশক, সেচ প্রকল্প, কোল্ড স্টোরেজ নিয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান। আর এসব দেখতে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে থেকে মেলায় এসে ভিড় জমিয়েছেন উৎসাহীরা।
টাঙ্গাইল থেকে রমজান আলী নামের এক কৃষক এসেছেন বীজ কিনতে। বললেন, কৃষি তার মূল পেশা না হলেও সবজি ফলাতে ভালবাসেন। তাই নতুন জাত কি আছে, দেখতে এসেছেন।
বাড্ডার বাসিন্দা রুমানা রহমান বলেন, বাসার ছাদে সবজি চাষে তার আগ্রহ। বলেন, টমেটো, বারমাসি বেগুন, মরিচ, লাই, চিচিঙ্গা আপাতত এগুলোর বীজ নিতেই মেলায় এসেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস