মাত্র চার মাসের ফসল। বছরে ফলন পাওয়া যায় তিনবার।
রাজশাহীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল রয়েছে বাঘায়। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আগে সেখানে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। মৌসুমি ফসল ছাড়া সে অর্থে সেখানে কোনো চাষাবাদই হতো না। সেই চরাঞ্চলেই এখন কুল চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষক।
রোদের তীব্রতা ও বালুর কারণে অন্যসব ফসব উৎপাদনে ব্যর্থ হলেও কুল চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। চরাঞ্চলে এখন পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ ও শাকসবজির পাশাপাশি আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করা হচ্ছে।
শীত থেকে গরমের শুরু অবধি সময়টা দেশি ফলের অভাব মেটায় প্রধানত দেশি কুল বা বরই। বাজারে টক-মিষ্টি গোল বরই ও নারকেল কুলের পাশে আপেল কুল এবং বাউকুল আছে স্বাদ মেটাতে। দাম হাতের নাগালেই। পুষ্টিবিদরা বলেন, কুলে আছে প্রচুর ভিটামিন আর খনিজ উপাদান। এটি দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্য হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আরও অনেক গুণ রয়েছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মার চরাঞ্চল নিয়ে নবগঠিত ইউনিয়ন চকরাজাপুর। প্রায় ৫ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমি এর অন্তর্ভুক্ত। তবে দাবদাহে অন্যসব ফসল উৎপাদনে হিমশিম খেতে হয় চকরাজাপুরের কৃষকদের। সেই রুক্ষ চরেই কুল চাষে সাফল হয়েছেন চাষিরা। তাই কুল চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন শিক্ষিত বেকার যুবকও। পরিত্যক্ত জমিতে কুল চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় যতই দিন যাচ্ছে কুলের আবাদ ততই বাড়ছে।
পদ্মার এই চরে কুল চাষ করে বর্তমানে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন স্থানীয় শফিকুল ইসলাম, সোনা মিঞা ও জামাল উদ্দিনের মতো অনেকে। পদ্মার চরেও যে সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমাণ করছেন এই শিক্ষিত বেকার যুবকরাই।
কুলচাষি শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মার চরের ১০৪ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গড়ে বিঘা প্রতি প্রায় দেড়শ মণ করে ফলন হবে বলে আশা করছেন।
অপর কুলচাষি জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে বাজারে পাইকারি দুই হাজার টাকা মণ দরে বাউকুল বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫০ টাকা কেজি পড়ছে৷ তবে খুচরা বাজারে কুল বরই ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪শ টাকা থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা দরে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, সাধারণত চরাঞ্চল এ ধরনের কুল বা আম চাষের জন্য উপযোগী। তাই পদ্মার চরেই কুল চাষ বেশি চাষ হচ্ছে।
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শিক্ষিত বেকার যুবকরা চরাঞ্চলে কুল চাষে ঝুঁকেছেন। এতে কুল চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রতি বছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। আর তাদের চাষবাসের জন্য ঋণ ছাড়া সব ধরনের সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। অল্প চাষে বেশি উৎপাদনের ব্যাপারে আগামীতে আর নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
তাহলে অন্য ফসলের পাশাপাশি কুল চাষ করেও স্থানীয় চাষিরা আরও লাভবান হতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন এই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
এসএস/এএ