সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সজনে চাষে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। তারপরেও পৌর শহর ও উপজেলার ৫ ইউনিয়নের গ্রামের বাসা-বাড়ির আশপাশে, গ্রামীণ সড়কের দুই ধারে, ক্ষেতের সীমানা বাঁধ, পুকুরপাড়, স্কুল-কলেজের মাঠে, এবং পরিত্যক্ত জমি মিলিয়ে প্রায় প্রায় আড়াইশত বিঘায় মৌসুমী ও বারোমাসি জাতের সজনের চাষ হয়েছে।
অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ভাল হয়েছে সজনের ফলন। তবে এ সবজি চাষে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় কৃষকরা লাভবান হলেও এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ করেন না কৃষকরা। তাই আজো এ সবজিটি সহজলভ্য হয়নি। এতে চাহিদা ব্যাপক থাকায় এর দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। সৈয়দপুর শহরের পাইকারি কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী গোল্ডেন বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত এ সবজি কখনই চাহিদা পূরণ হয় না। তাই বরাবরেই আমদানি করতে হয়। এতে মৌসুমের শুরুতে প্রতিকেজি সজনে ১ থেকে দেড়শো টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে বর্তমান স্থানীয় সরবরাহ বাড়ায় এর দর কমে এখন কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার শ্বাসকান্দর গ্রামের আবদুল কাদের, কামারপুকুর ইউনিয়নের নজিবুল ইসলাম, পৌর এলাকার জাবেদুল কৃষক জানায়, এটি আমাদের অনাদরে বেড়ে ওঠা একটি ফসল। আমরা ডাল ভেঙে যেকোনো উঁচু জমিতে রোপন করি। যত্ন ছাড়াই পরের মৌসুমে বেড়ে ওঠে ও ফলন ধরে। অথচ অবহেলাতেও এ সবজির গাছগুলোতে ব্যাপক সজনে ফলে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে ভাল দাম পেয়ে সংসারের উপকার হয়। তবে এর ব্যপক চাষাবাদে স্থানীয় কৃষি অফিস যথাযথ পদ্ধতি ও উপকরণ দিলে এর উৎপাদন বেড়ে যেতো এবং দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন কৃষকরা।
উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের যানেরপাড় এলাকার কৃষক সোলেমান আলী বলেন, আমার বাড়ির সামনের রাস্তার উভয় ধারে, উঠানে ও ক্ষেতের বাঁধে মিলে ছোট-বড় ২০টি সজনের গাছ আছে। গত বছরে ওইসব গাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকার সজনে বিক্রয় করেছিলাম। আশা করছি, এবার আরো বেশি টাকার সজনে বিক্রয় করতে পারবো।
উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামের শংকর বাবু বাংলানিউজকে জানান, সজনে চাষাবাদে কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। শুধু পরিবারের জন্য সজনে গাছের ডাল লাগাতাম। এতেই বাড়িতে খাবারের পাশাপাশি সজিনা বাজারে বিক্রি করেছি। এবার ফলন আরো ভাল হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভাল সজনে পাওয়া যাবে।
সৈয়দপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হোমায়রা মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ফলজ সজনে গাছের ডাল থেকে চারা করা হয়। রোপণের পর তেমন যত্ন না নিলেও নিভৃতে ৬ থেকে ৮ মাস বয়সের পর ফল ধরে। এদের তেমন কোনো রোগ-বালাই নেই। তাই এ সবজি চাষে ব্যয় খুবই কম। আগামীতে এর চাষ বাড়াতে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হবে।
জনশ্রুতি ও চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি লাভজনক ফসল এবং এটির ওষুধি গুণাগুণও আছে। বিশেষ করে বসন্ত রোগ প্রতিরোধে এর ব্যাপক কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। এছাড়াও এন্টিবায়েটিকসহ অন্যান্য জটিল রোগে সজনে, পাতা ও সজনে গাছের নানা অংশ ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৯
এএটি