ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট শত বিঘা জমির ধান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৯
ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট শত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দিনাজপুরের খানসামার দু’টি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে ৪০০ বিঘা জমির ধান। শুধু ধান নয় নষ্ট হচ্ছে লিচু, আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফলের গাছও।

একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অপরদিকে ইটভাটার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পথে বসেছে কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ’ দরিদ্র কৃষক।  

সরেজমিনে খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কুমড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে পাকা ধান।

এরমধ্যে কিছু পাকা ধান দেখতে অদ্ভুত রকমের। এসব ধান নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ জমির পাশেই থাকা ‘এসএইচএস’ ও ‘টুস্টার’ নামে দুইটি ইটভাটা। ভাটা দুইটি পরিচালনার জন্য প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই।

জানা যায়, মৌসুম শেষ হওয়ায় ভাটার মালিক ২৮-২৯ এপ্রিল ভাটা দু’টির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বন্ধের পরদিন থেকে ভাটা দু’টির চিমনি দিয়ে বিষাক্ত গ্যাস বের হওয়া শুরু হয়। এই বিষাক্ত গ্যাসের কারণে ধান, ভুট্টা, গম, রসুন, মৌসুমি ফল লিচু, আম, কাঁঠাল গাছসহ বিভিন্ন ফসল ও ফলের গাছ পুড়ে গেছে। এছাড়াও ওই গ্যাসের কারণে এলাকার ফার্মের মুরগিও মারা যাচ্ছে।

ওই গ্রামের কৃষক রাকিবুল ইসলাম, মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ফজিবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটা বন্ধের পরদিন রাত থেকে এলাকার সব ধরনের গাছ বিষাক্ত গ্যাসের কারণে মরতে শুরু করেছে। কি করবো আমাদের এই গ্রামের বেশিরভাগ কৃষক এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করছেন। নিজের ফসল পুড়তে দেখতে যেমন খারাপ লাগছে তেমনি এনজিওদের ঋণের দায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।

স্থানীয় কৃষকেরা বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে ওই ২ ভাটার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ভাটা কর্তৃপক্ষ জানায়, যদি আমাদের ভাটার কারণে ক্ষতি হয় তাহলে আমরা ক্ষতিপূরণ দিব। কিন্তু ধান পুড়ে যাওয়ার কারণ আমাদের ইটভাটা নয়। ইটভাটার চিমনি রয়েছে এছাড়াও বিষাক্ত গ্যাস বের হওয়ার জায়গা রয়েছে আমাদের। অতএব এসব ক্ষতির দায় আমরা নিতে পারব না।

টুস্টার ভাটার মালিক সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে এ ঘটনা ঘটেনি। আমাদের মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস বের করার চিমনি রয়েছে। ক্ষতির কারণ আমার ইটভাটা নয়।
 
খানসামার ভাবকী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের ফলে ধান নষ্টের খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। অভিযুক্ত ২ ইটভাটার মালিকদের হতদরিদ্র কৃষকদের মধ্যে অনুদান বরাদ্দ করতে হবে।

খানসামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ওই গ্রামের কৃষকদের ক্ষতি পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে অভিযুক্ত ২ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।