ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ নেই, আউশ আবাদ অর্ধেকে নেমেছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৯
ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ নেই, আউশ আবাদ অর্ধেকে নেমেছে চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ উর্বর জমি। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিকের সংকট, উৎপাদন খরচ না উঠাসহ নানান প্রতিকূলকায় প্রান্তিক কৃষকরা আউশ আবাদ করছেন না। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ উর্বর জমি এখন অনাবাদি। আগাছায় ভরে আছে হাজার হাজার একর জমি।

বিগত বছরগুলোতে কৃষকরা রবি ফসল ফসল (বাদাম, সয়াবিন, মরিচ ও ডাল জাতীয়) ফসল ঘরে তোলেই আউশ ধানের আবাদ করতেন। বৈশাখ মাসে জমিতে ধান বুনেতেন।

কেউ কেউ বীজ তলায় চারা করে আষাঢ় মাসে রোপণ করতেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে স্থানীয় কৃষকরা আউশ আবাদ না করে অলস সময় পার করছেন। যে কারণে এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। আবাদ নেমে এসেছে অর্ধেকে ।

আউশ ধান আবাদে উর্বর মাটি থাকায় প্রতিবছরই লক্ষ্মীপুরে বাম্পার ফলন হয়। তবে ভালো ফলন হলেও ধান চাষে কৃষকদের এখন আর আগ্রহ নেই।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, রবি ফসল ঘরে তোলেই আউশের আবাদ করতে হয়। যে কারণে আউশ ক্ষেতে প্রচুর আগাছা জন্মে। জমি ফসলের জন্য উপযোগী করতে ও ভালো ফলনের জন্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তবে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য মেলে না। যে কারণে বেশিরভাগ কৃষক আউশ আবাদ করা থেকে বিরত রয়েছেন।

রামগতি উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছালেহ উদ্দিন পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি উফশী জাতের ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন, স্থানীয় জাতের ২ থেকে ২ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। তবে এবার ‍কাঙ্খিত আবাদ হয়নি।  

লক্ষ্মীপুর কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ২৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৭১৫ হেক্টর। রায়পুরে ৪ হাজার হেক্টর। রামগঞ্জে ৫০০ হেক্টর। রামগতিতে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর ও কমলনগরে ১১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। চলতি মৌসুমে আবাদ কমেছে।  

মঙ্গলবার (২ জুলাই) পর্যন্ত জেলার ৫ উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়। এরমধ্যে সদরে ১ হাজার ৫৬০, রায়পুরে ৩ হাজার ৮০০, রামগঞ্জে ৩৫০, রামগতিতে ৭ হাজার ৫৫০ ও কমলনগরে ৪ হাজার ৭৪০ হেক্টর। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে গিয়ে দিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি।  
চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ উর্বর জমি।  ছবি: বাংলানিউজ
গেলো মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনে তারা খুশি হয়েছেন। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফোটেনি। ধানের কাঙ্খিত দাম পায়নি কৃষক। ধান বিক্রিতে উৎপাদন খরচও উঠেনি তাদের। কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। আর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হয়েছেন হতাশ। তাদের এখনো হতাশা কাটেনি। গত বছর কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম দামেই ধান বিক্রি করছেন। কেউ কেউ বেশি দাম পাওয়ার আশায় সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।

কৃষকরা জানাচ্ছেন, প্রতিমণ ধানে তাদের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ৮শ টাকা। কিন্তু সেই ধান বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। মণ প্রতি লোকসান গুনতে হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

চর মার্টিন গ্রামের বর্গাচাষি দীন মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর তিনি ১৬০ শতাংশ জমি বর্গা চাষ করেন। তাতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হয়েছে ৬০ মণ। জমির মালিককে দিতে হয়েছে ৩০ মণ। বাকি ৩০ মণ আউশ বিক্রি করে তার উৎপাদন খরচের টাকা উঠেনি। যে কারণে তিনি এবার সামান্য জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। আবাদ ধানের আশায় নয়, গরুকে খাওয়াতে খড়ের আশায়।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, আউশ ধান বৃষ্টি নির্ভর, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কৃষক পানির অভাবে চারা রোপণ করতে পারেনি। এছাড়া ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ধান চাষে কৃষককের আগ্রহ কমেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এসআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।