জেলার বিভিন্ন চা বাগানের ‘লাল মাকড়সার’ তীব্র আক্রমণ। কোনো কোনো সেকশনের (সুনির্দিষ্ট এলাকা) চা গাছের পাতাগুলো সবুজের পরিবর্তে কালো হয়ে আছে।
রোববার (৭ জুলাই) চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার মধ্যে কিছু কিছু সবুজপাতা পরিবর্তিত হয়ে কালো রং ধারণ করেছে।
প্রতিবেদনের ছবিগুলো ভাড়াউড়া চা বাগানের ফাঁড়ি বাগান খাইছড়া থেকে তোলা হয়েছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে চা উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার এবং বারোমাসিয়া চা বাগানের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হক ইবাদুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘রেড স্পাইডার’ বা ‘লাল মাকড়সা’ চা পাতাগুলোর ‘ক্লোরোফিল’ বা রস খেয়ে ফেললে পাতা এমন হয়ে যায়। তখন গাছে নতুন পাতা পুনরায় গজাতে সময় নেয়। মৌলভীবাজারসহ বৃহত্তর সিলেটে জুন-জুলাই মাসে এ রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি। এই ‘লাল মাকড়সার’ পা রয়েছে ৮টি। প্রতি ১১ থেকে ১২দিন পর পর মাকড়সার ডিম থেকে লাখ লাখ বাচ্চা ফুটে, তা চা গাছগুলোতে সংক্রমিত হয়।
এ রোগটির বিস্তার সম্পর্কে ইবাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটের চা বাগানগুলো অন্যতম রোগ এটি। কয়েকটি কারণে এ রোগটি বেশি পরিমাণে বিস্তার লাভ করেছে। কারণ-সংশ্লিষ্ট এলাকার তাপমাত্রার বাড়লে, সেকশনে জলাবদ্ধতা থাকলে, বৃষ্টিপাত কমলে এবং চা বাগানের সেকশনগুলোতে (সুনির্দিষ্ট এলাকা) সেড-ট্রি (ছায়াবৃক্ষ) না থাকলে। আর মানুষ ও পশুর মাধ্যমে এ রোগটি ছড়ায়। যারা চা পাতা সংগ্রহ করেন (প্লাকার), তাদের কাপড় বা শরীরে লেগে লাল মাকড়সাগুলো এক সেকশন অন্য সেকশনে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া গবাদি পশুর মাধ্যমেও ছাড়ায়। বাগানের একটি সেকশনে যখন গরু ঘাস খেতে প্রবেশ করে। লাল মাকড়সাগুলো গরুর শরীরে ভর করে পাশের সেকশনগুলোতে ঢুকে ক্ষতি সাধন করে।
এর প্রতিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, চা বাগানে এ রোগের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিটি সেকশনে বেশি পরিমাণে সেড-ট্রি (ছায়া বৃক্ষ) লাগাতে হবে। সেকশনে যাতে গবাদি পশু প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে ও সেকশনগুলোতে জলাবদ্ধতা থাকলে সেগুলো ন্যূনতম চার ফুট করে খনন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। সেকশনগুলোর (সুনির্দিষ্ট এলাকা) জলাবদ্ধতা দূর করলে, সেড-ট্রিগুলো না কাটলে (ছায়া বৃক্ষ) এবং আবাদে গরু-ছাগল চড়তে না দেয়সহ প্রভৃতি ব্যবস্থাগ্রহণ করলে এ রোগ প্রায় ৫০ শতাংশ কমবে।
এর প্রতিকার সম্পর্কে ইবাদুল হক বলেন, এ রোগ দমন করতে মার্চ মাসে সালফার জাতীয় কীটনাশক ‘প্রোপাজয়েট’, ‘এমামেক্তিন বেনজয়েট’, ‘স্পিরমেসিফেন-ফেনাসকুইন’ প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) নিবন্ধিত ওষুধ।
আবার কেউ ওই রাসায়নিক কীটনাশকগুলো যদি ব্যবহার করতে না চায়, তবে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারেন। এটি পরিবেশবান্ধব ও গাছের জন্য উপকারী। এ জৈব বালাইনাশকটি ‘নিমতেল’ ও প্রাকৃতিক সাবান ‘রিঠা ফল’ মিশ্রণ করে আক্রান্ত গাছগুলোতে ব্যবহার করলে এই পোকা দমন হয় বলে যোগ করেন অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার ইবাদুল হক।
ফিনলের ডেপুটি জেনালের ম্যানেজার এবং অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেই এ সময় বাগানগুলোতে এবার ‘রেড স্পাইডার’ আক্রমণ করে থাকে। তবে এ রোগটির দমন সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিভিন্ন চা বাগানগুলো উন্নতমানের কীটনাশক ব্যবহার করে এ রোগটির প্রতিরোধ করে থাকে। চা গাছের রোগব্যাধির এটি চলমান প্রক্রিয়া, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৯
বিবিবি/এএটি