প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগে ১০ জেলায় প্রায় ৬ লাখ পশু কোরবানির সম্ভাবনা রয়েছে। খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে বিভাগে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৪টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, কোরবানির জন্য খুলনাঞ্চলের খামারিদের মাধ্যমে নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করার কার্যক্রম সার্বক্ষনিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সুষম খাবার এবং নিয়মিত কৃমিনাশকের ব্যবস্থাসহ পশুপালনের ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হওয়ার জন্য খামারিদের সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। এর কারণে গরু উৎপাদনে বিরাট সফলতা এসেছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে পশু কেনা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। আসন্ন ঈদ কেন্দ্র করে কোরবানির জন্য এখন থেকেই গরু কিনে মজুদ শুরু করেছেন তারা। কোরবানিতে গরু বাজারজাত করে ভালো আয় করতে পারেন তাই এখনই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, কোরবানির ঈদে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশুর দরদাম শুরু করছেন। কিনছেনও অনেকে। তবে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় পশু লালন-পালনে এবার খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।
জানা যায়, খুলনার তেরখাদা, ফুলতলা, রূপসা, দিঘলিয়া ও ডুমুরিয়া উপজেলা, নড়াইলের কালিয়া ও যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুরে খামারের সংখ্যা বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানিকে সামনে রেখে ব্যস্ত খুলনাঞ্চলের গবাদি পশুর খামার মালিকরা। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবারের ওপর নির্ভর করে পশুগুলোকে কোরবানির উপযুক্ত করে গড়ে তুলছেন তারা। বিশাল আকৃতির গরু এখন খুলনার খামারগুলোতে। তবে এসব গরু পালনে যে খরচ হয়েছে, ভারত-মিয়ানমার থেকে গরু অনুপ্রবেশে যেন লোকসান না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার দাবি খামারিদের।
খুলনার তেরখাদার পূর্ব কাটেঙ্গা এলাকার খামারি রসুল মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, কোরাবানিকে সামনে রেখে বিদেশি বিভিন্ন জাতের ৭টি গরু লালন পালন করেছি। এবার ভালো দাম পাবেন আশাবাদী তিনি। মানভেদে প্রতিটি গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হবে।
ওই খামারির মতে, খুলনাঞ্চলের খামারিরা প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি, ফিড ও কাঁচা ঘাস দিয়ে পশু মোটাতাজা করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছেন। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবারের ওপর নির্ভর করে পশুগুলোকে কোরবানির উপযুক্ত করে তুলছেন তারা। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে ভালো লাভের আশা করছেন খামারিরা।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদ আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার ১০ জেলায় চাহিদা অনুযায়ী খামারগুলোয় পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু আছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ওই কর্মকর্তা বলেন, খুলনার ১০ জেলায় মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৯ জন খামারি রয়েছেন। ৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৪টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় গরু আছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৮টি, বলদ গরু ৩১ হাজার ১৫০টি, গাভি (বাচ্চা উৎপাদনে অক্ষম) ৩৩ হাজার ৩৭৯টি, মহিষ ১৯ হাজার ৩৩টি, ছাগল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৭০টি ও ভেড়া ৯ হাজার ৪৪৩টি। অন্যান্য গবাদি পশু আছে ৬২১টি। এগুলোও কোরবানির পশুর হাটে তোলা হবে।
ওই অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদ আহমেদ খান বলেন, প্রতিটি থানায় অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নে ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা যেন করতে না পারে। সেজন্য মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। সুষম খাবার ও নিয়মিত কৃমিনাশকের ব্যবস্থাসহ পশুপালনের ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমআরএম/এএটি