খামারি আক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গরুগুলো ধবল হওয়ায় আদর করে সেগুলোর নাম রাখা হয়েছে সুন্দরী। সন্তানের মতোই দেখভাল করেছি।
হাটে এসব ধবল গরু ১০ মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু অনেক জেলা থেকে ভুল বুঝিয়ে ক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেয় ধবল গরু। ক্রেতারাও এখন বেশি দাম দিয়ে এসব গরু কিনেন না। তাই চাহিদাও কমে আসছে হাটে। গো খাদ্যের দাম বাড়ায় ও ভারত থেকে গরুর অনুপ্রবেশের জন্য ৬ থেকে ৭ বছর ধরে লোকসান গুণতে হচ্ছে এখানকার খামারিদের।
তিনি আরও বলেন, ২৫ বছর আগে ধবল গরুর একটি বাছুর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় কেনা যেতো। এখন একটি কিনতে দেড় লাখ টাকা লাগে। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে খরচ লাগছে ৬শ টাকা। বিগত কয়েক বছর আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এককেজি খৈল পাওয়া যেতো। এখন বাজার এর দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। লোকসান গুণতে হলেও পূর্বপুরুষের এই পেশা টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন বলে যোগ করেন তিনি। খামারি মঞ্জুর হোসেন ও আক্তার হোসেনের সঙ্গে একমত অনেক খামারি। ঈদুল আজহার বাকি মাত্র আট দিন। তাই ঈদকে সামনে রেখে মিরকাদিম পৌরসভায় ১০ থেকে ১২টি পরিবার ঐতিহ্যবাহী ধবল গরু পালন করছে। এসব গরুর সন্ধান পেতেও এখন বেগ পেতে হয়। চাঁদরাতে বা দু’দিন আগে পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জে গণি মিয়ার হাটে নিয়ে যাওয়া হবে এসব গরু। তবে ৪০ থেকে ৫০ বছরের গরু লালন পালন পেশা ছেড়েছে অনেক পরিবার। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায়, ঈদে গরুর অনুপ্রবেশ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে গরু পালন কমেছে বলে জানালেন খামারিরা।
গরু যত্নের ব্যাপারে খামারিরা বলছেন, শ্যাম্পু দিয়ে পরম আদরে পালিত গরুকে নিয়মিত গোসল করানো হয়। পরে নতুন লাল রঙের গামছা দিয়ে গরুদের শরীর মোছা হয়। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে রাতে গোয়ালঘরে নিয়মিত মশারি টানানো হয়। শীতকালে গরুর গায়ে জড়ানো হয় বিশেষ ধরনের লেপ। ট্যাবলেট খাইয়ে বা ইনজেকশন দিয়ে এখানকার গরু স্বাস্থ্যবান করা হয় না। সাধারণত খৈল, ভুসি, খেসারি, খুদ ইত্যাদি খাইয়ে এখানকার গরুর সুদর্শন করা হয়। যাকে বলা যায় সুস্বাস্থ্যবান।
মিরকাদিম পৌরসভার টেংগর গ্রামের দ্বীন মোহাম্মদ মিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ৪০ বছর ধবল গরু পালন করার পর তিনি এই পেশা ছেড়েছেন। কারা এই পেশা ধরে রেখেছেন ঠিকমতো বলতে পারেননি তিনি।
দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ধবল গরু পালন অনেকটা নেশার মতো। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা অনেক আধুনিক। এখন গরু পালনকে সামাজিকভাবে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়। ছেলে-মেয়েরাও নিষেধ করে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বিবেচনা করে গরু পালন ছেড়েছি। এছাড়া গরু পালনের পরিবেশ আর নেই। চারদিকে দালান কোঠা নির্মাণ বাড়ছে এবং জমির পরিমাণও কমে আসছে। টেংগর গ্রামের মৃত চাঁন সওদাগরের ছেলে মো. কালাম উদ্দিন। তার বাবা ও দাদা মৃত আব্দুল খালেক ছোটবেলা থেকেই ধবল গরু লালন পালন করে আসছিলেন। গরু পালনের মাধ্যমেই সংসারের অভাব দূর করতেন। তার মূল পেশা দোকান ও অটোরিকশার গ্যারেজ। ১০ বছর আগেও পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন সবাই মিলে ধবল গরু লালন পালনের করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে ভাইদের মধ্যে কেউ প্রবাসী ও বাকিরা ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। তিনি একমাত্র পূর্বপুরুষের ধবল গরু পালন ধরে রেখেছেন।
খামারি মো. কালাম উদ্দিন বলেন, পৌরসভা এলাকায় মাঠে ঘাস নেই। গতবার ৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে বিক্রি করা হয়েছিল। এবার তিনটি গরু কোরবানির জন্য হাটে নেবেন। বর্তমানে যেই তিনটি গরু আছে এসব ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, দেড় লাখ টাকা ও ২ লাখ টাকা বিক্রি করার ইচ্ছা আছে। যেই পরিমাণ শ্রম ও খাটুনি দেওয়া, সেই পরিমাণ মূল্য পাওয়া যায় না। শখ করে লোকসান গুণতে হলেও চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন তিনটি গরুর পেছনে ১৫শ টাকা খরচ হয় বলে যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এএটি