‘এসব উপজেলার অনেক জমি এখনো বন্যার পানির নিচে। দ্রুত সময়ে পানি না নামলে চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান এসব জমিতে লাগাতে পারবেন না কৃষকরা।
চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান চাষ সম্পর্কে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথাই জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান।
তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে পরিস্থিতির আলোকে সময় উপযোগী ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের। এজন্য কৃষি বিভাগ আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। তবে, সবকিছুই নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমি। ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন লাগানো হয়েছে। ধানের বয়স হয়েছে ১০ থেকে এক মাস পর্যন্ত। ১৫ জুলাই থেকে শুরু করে পুরো আগস্ট মাস অবধি ধান লাগানো চলবে ও চলছে। অবশ্য কিছু জাতের ধান ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাগানো যায়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বীজ পাওয়াটা মুশকিল। তবে, কৃষক চাইলে এখনো চাহিদা অনুযায়ী বীজতলা তৈরি করতে পারেন দাবি কৃষি বিভাগের।
এদিকে, এবারের বন্যায় কোমর ভেঙে যাওয়া কৃষকদের কথায় ওঠে আসে নানামুখী দুর্দশার যত সব করুণ চিত্র।
তাদের ভাষ্য, ‘দুর্যোগ যেন কোনোভাবেই তাদের পিছু ছাড়ছে না। মনুষ্য সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন লেগেই আছে। ধানের ফলন ভালো হলে বাজারে দাম পাওয়া যায় না। সরকার তাদের কাছ থেকে ধান কেনার ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনেন। যেমন গেলো বোরো মৌসুমের ধান চাষ করে প্রত্যেক কৃষককে চরম লোকসান গুণতে হয়েছে। অনেক কৃষকের মূলধন গায়েব হয়ে গেছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এখনো ঘুরছেন অনেক কৃষক। কিন্তু গুটি কয়েকজন কৃষক ছাড়া সিংহভাগ কৃষকই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি। ’
‘আবার অনেক বছর বর্ষায়ও বৃষ্টির দেখা মেলে না। তখন সেচ দিয়ে ধান চাষ করতে হয়। এতে বেড়ে যায় উৎপাদন ব্যয়। কিন্তু ধানের দাম তো ক্রমেই কমতির দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অনন্ত তাই বলছে। গেলো বোরের অবস্থা ছিল আরও করুণ। এরইমধ্যে আবার বন্যার হানা। বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে অনেক কৃষক এখন পাগলপ্রায়। এভাবে প্রতিনিয়ত মনুষ্য সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে প্রত্যেক কৃষককে। ’ কিন্তু এভাবে আর কতদিন– প্রশ্ন কৃষকদের।
কৃষক সাদেকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, অন্য কোনো পেশা জানা নেই। আবার ব্যবসা বা অন্য কিছু করার পুঁজিও নেই। তাই অনেকটা লোকসান স্বীকার করেই ধারদেনার টাকায় রোপা-আমন চাষে মাঠে নেমেছেন এই কৃষক। প্রায় ১৫ বিঘা জমির মধ্যে ১২ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর কাজ শেষ করেছেন তিনি।
কৃষক আরমান আলী বাংলানিউজকে জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর কাজ শেষ করেছেন। তার ক্ষেতের ধান বয়স প্রায় মাসখানেকের মতো। জমির ধান পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
একই সুরে কৃষক আব্দুল হামিদ ও ফরিদ হোসেন বাংলানিউজকে জানালেন, ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। কারণ সামনে তো কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া তাদের মতো কৃষকদের কিউবা করার আছে। তাই বিগত দিনের লোকসানের বিষয়টি মাথায় রেখে ঝুঁকি নিয়েই আবারও রোপা-আমনের মাঠে পা রেখেছেন তারা।
এসব কৃষকরা জানান, জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা। অনেকেই জমি প্রস্তুত করছেন। ধানের চারা রোপণ করছেন অনেকেই। বীজতলা থেকে বীজ তুলছেন। আবার অনেকেই জমির ধান পরিচর্যা করছেন। সবমিলে ভাগ্যের লিখন মেনেই রোপা-আমন চাষে মাঠে নেমেছেন উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডারখ্যাত বগুড়ার কৃষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি