কৃষি ও রাজমিস্ত্রী এ দু’পেশাতেই কুলাচ্ছে না আর জীবনের উপার্জন। জীবনের দ্বারপ্রান্তে যেন সর্ব থেকো অদৃশ্য দানবের বসবাস।
অন্যের জমিতে বছরে দু’বার ধান চাষ করেন অর্জুন। সারাবছর ক্ষেতে ধান চাষ করে তিনি প্রায় ৩৫/৪০ মণ ধান ঘরে তুলেন। কিন্তু তার মধ্য থেকে জমির মূল মালিককে দিতে হয় অর্ধেক। অর্জুনের পক্ষে জুটে বাকি অর্ধেক।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের উত্তর টিকরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো সবুজ ধানের মধ্যে বেশ কিছু শীষ নষ্ট হওয়ার পথে। লাল হয়ে পেঁচিয়ে যাচ্ছে। বাংলানিউজকে অর্জুন দেবনাথের বলেন, আমি প্রায় আড়াই কেয়ার (৭৫ শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করে থাকি। কিন্তু কৃষি কাজ করে আয় তেমন একটা হয় না। আগের থেকে ধানের মণের দাম কমে গেছে। ভালো দাম পাওয়া যায় না। ফলে সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে।
বিকল্প পেশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে পারি না বাবু। তাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। স্ত্রী ও দু’মেয়ে নিয়েই আমার সংসার। তবুও বড় কষ্ট হয় সংসার চালাতে।
ধানের ক্ষতি সম্পর্কে অর্জুন বলেন, এবার শ্রাবণের প্রথম দিকে ‘গুটিস্বর্ণ’ নামক ধান লাগিয়েছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ধানের পাতাগুলো লাল হয়ে পাটের রশির মতো মুড়ে মুড়ে যাচ্ছে। সার হিসেবে আমি পটাশ, ইউরিয়া, টিএসপি এবং গোবর সার দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। শুধু এ সমস্যা আমারই নয়। আমাদের গ্রামের বীরেন্দ্র মোহান্ত, অজিত দেবনাথসহ অনেক কৃষকের।
যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আসলে শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নে ‘গুটিস্বর্ণ’ ধান কৃষকরা লাগিয়েছে বেশি। এটি আমন জাতীয় ধান। কিন্তু এই ধানটাতে পাতামুড়ানো পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে বেশি। এই পোকাগুলো এই জাতের ধানের পাতাগুলোকে মুড়িয়ে ফেলে। তাই আমরা কৃষকদের এ প্রজাতির ধান না লাগানোর জন্য বলে থাকি। কিন্তু তারা শুনেন না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গুটিস্বর্ণ’ ধানটি প্রচুর ক্ষতি করে থাকে। এই ধান রোগ এবং পোকার বাহক। মানুষ তো বুঝে না। দেখা যায় যে, কৃষকরা না বুঝে ২/৩ মণ ধানের জন্য প্রতি কেয়ারে (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) এই ধানটি লাগিয়ে নিজের জমির ক্ষতি করে থাকেন।
আর এই ‘গুটিস্বর্ণ’ ধানটি মাটির ঊর্বরতা শক্তি নষ্ট করে থাকে বলেও জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবার ১৫, ২০১৯
বিবিবি/এএটি