মঞ্জুর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, একই গ্রামের জমসেদ আলীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকায় ৪০ শতক জমি পত্তন নিয়ে সেখানে শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে বাম্পার ফলন হবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে দুই ধাপে ৫ মণ করলা বিক্রি করেছি। আরও ২ থেকে ৩ ধাপে করলা বিক্রি করতে পারবে। ছেলে গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, ৪০ শতক জমি প্রস্তুত, মাচা তৈরি ও বিজসহ মোট আড়াইহাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা দেখভাল করছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছেন।
শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরে আলম বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর উপজেলাতে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হবে। বাজার দর ভালো থাকলে লাভবান হবেন কৃষকরা। তার মতো অনেকেই সবজি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন এখন।
শাজাহানপুর উপজেলায় বাঁধাকপি ছাড়াও ফুলকপি, বেগুন, টমেটো, শিম, বরবটিসহ শীতকালীন নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। এ বছর শুধু এ উপজেলায় প্রায় ৯শ হেক্টরের অধিক জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করা হয়েছে। এই আবাদ এখনও অব্যাহত রেখেছেন এ উপজেলার কৃষকরা, জানালেন স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, গাবতলী, নন্দীগ্রাম, কাহালু, ধুনট ও সোনাতলার কৃষকরা অনেকটা বড় পরিসরে সবজি চাষ করে থাকেন। এর মধ্যে শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার কৃষকরা সবজি চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের চারাও উৎপাদন করেন। অবশ্য চারা উৎপাদনের দিক দিয়ে জেলার মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলা এখনও শীর্ষে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে যেনো সবুজের হাসি বিরাজ করছে। কেউ ক্ষেতের সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউ কেউ নতুন করে আবাদের জমি প্রস্তুতি করছেন। আবার বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদনেও ব্যস্ত অনেক কৃষক। সবমিলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম, টমেটো, কাঁচামরিচ, মূলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাঁজর, পটল, লালশাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ।
আজাহার উদ্দিন, আব্দুল বাসেদ, সাদেক আলী, জলিল শেখসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, সবজি চাষ করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক কম সময়ে তা বাজারজাত করা যায়। নিজেদের চাহিদা মেটানো যায়। প্রায়ই হাট-বাজারে বিকিকিনি করা যায় সবজি। এতে করে কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলে সম্ভব না।
আরও বলেন, শীতকালীন সবজি হিসেবে প্রায় তিনভাগে সবজি চাষে নামেন কৃষকরা। অনেকেই শীতের প্রথম ভাগে সবজি বাজারে তুলতে মাঠে নামেন। কারণ এই সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ভাগে শীতের মাঝামাঝিতে সবজি হাটে-বাজারে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেন কৃষকরা। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে এ সময়টাতে সবজির ভালো দাম মেলে। তবে শেষভাগে উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাওয়া নিয়ে অনেকটা ঝুঁকি থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি চাষে লাভবান হবেন কৃষকরা। শীতের সবজি নিয়ে বগুড়া জেলার কৃষকরা বরাবরই ব্যস্ত থাকেন।
তিনি আরও বলেন, সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে এ জেলার কৃষকরা নিজেরাই অনেকটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনী পরামর্শ দেওয়া হয়। সবমিলে এ জেলায় সবজি চাষ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
কেইউএ/ওএইচ/