গত এক মাস ধরে পেঁয়াজের ঝাঁজ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আকাশচুম্বী মূল্য হওয়ায় সব মহলেই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এখন পেঁয়াজ।
এদিকে ক্রেতাদের কাছে ঝাঁঝালো হয়ে ওঠা পেঁয়াজেই আশার আলো দেখছেন সিরাজগঞ্জের চাষিরা। বর্তমান বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় প্রতিবছর লোকসানের শিকার কৃষকদের স্বপ্ন এবার তারা অধিক মুনাফা পাবেন। ফলে বীজের অত্যাধিক মূল্যও পেঁয়াজ চাষ থেকে বিরত রাখতে পারেনি কৃষকদের।
রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চর হরিপুর, জগৎগাঁতী, কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ি ও পাইকোশা এলাকায় পেঁয়াজ চাষিদের মুখে ফুটে ওঠা হাসির রেখাই বলে দেয় তাদের স্বপ্নের কথা। চর হরিপুর গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। অক্টোবরের শুরুতে তিনি বীজবপণ করেন। নভেম্বরের শেষ দিকে তিনি ডাঁটা পেঁয়াজ বাজারে তুলতে পারবেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমদিকে বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারমূল্যও বেশ চড়া। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে পারলে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর চড়া দামে বীজ কিনতে হয়েছে। বিঘায় প্রায় ৩০ হাজার টাকার বীজ কিনতে হয়েছে। এছাড়া সেচ, চাষ, নিড়ানি বাবদ খরচ হয়েছে আরও ২৫ হাজার টাকা। ভালো দাম না পেলে পুঁজি ফেরত পাওয়াই কষ্টকর হবে বলে যোগ করেন তিনি।
একই এলাকার তোজাম হোসেন, তাহের আলী, নিজাম উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, আমরা এ সময়ে বেশিরভাগই ডাঁটা পেঁয়াজ আবাদ করে থাকি। ডাঁটা পেঁয়াজ তোলার পরপরই গুটি পেঁয়াজের বীজবপন করা হবে।
আছের উদ্দিন, শাহ আলম, আমজাদ আলী, ছাকাত আলী, জগৎগাঁতী গ্রামের হাফিজুল ও কয়েলগাঁতীর আইয়ুব আলী বলেন, প্রতিবছরই আমরা পেঁয়াজ আবাদ করেই লোকসান গুনি। একদিকে বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে যায় অপরদিকে বাজারে ন্যায্যমূল্যও মেলে না। এ কারণে এ অঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে, এ বছর বাজারমূল্য বেশি থাকায় প্রথম থেকেই কৃষকেরা পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকছে। চর হরিপুরের কৃষক আব্দুল খালেক আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ডাঁটা পেঁয়াজ তিনি বাজারে তুলতে পারবেন। বিঘা প্রতি ৭০/৭৫ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে আশাবাদী তিনি।
তিনি বলেন, প্রতিবিঘা পেঁয়াজ চাষে কৃষকের খরচ হয় ৬০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ১০০০-১২০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় চাহিদার ৪ শতাংশের এক শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন চাষিরা। এ জেলায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে চাষ হয় ১০ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর পর্যায়ক্রমে এক হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে তিনশ হেক্টর জমিতে ডাঁটা পেঁয়াজ উৎপাদন করা হচ্ছে। যেটা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বাজারে আসবে। পরবর্তীতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৭শ হেক্টর জমিতে গুটি পেঁয়াজের বীজ বোনা হবে।
পেঁয়াজ চাষিদের লোকসানের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ জেলার চাষিরা যখন উৎপাদন শুরু করেন। এ সময় দেশের বাজার গুটি পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে যায়। পুরো মৌসুমের সময় তারা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারে না বলেই লাভবান হতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
এএটি