ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০
মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক

মাগুরা: মাগুরা সদর উপজেলার লক্ষ্মীকন্দর গ্রামটি স্থানীয়ভাবে শিম গ্রাম হিসেবে পরিচিত। চলতি মৌসুমে এই গ্রামে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শিম সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু মধ্যসত্ত্বভোগী ও ব্যাপারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে বরাবরই এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শিমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। 

জেলা কৃষি বিভাগ ও বাজার বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, শিম চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তবে তারা জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে কৃষকের উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।


  
মাগুরা সদরের লক্ষ্মীকন্দর গ্রামের রাস্তার দুই পাশে যেদিকে চোখ যায় শুধু শিম আর শিম ক্ষেত। বছরের পর বছর ধরে পারনান্দুয়ালী, ঠাকুরবাড়ী, লক্ষ্মীকন্দর, কছুন্দি, রামনগর, বেলনগর, পতুরিয়া, দুর্গাপুরসহ আশপাশের ১০ গ্রামের কমপক্ষে এক হাজার কৃষক এ মাঠে শুধু শিম চাষ করে আসছেন। এখানকার উৎপাদিত স্থানীয় জাতের মোটা ও চওড়া শিম সারাদেশে ব্যাপক সমাদৃত। যে কারণে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে চালান হওয়ার পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত শিম বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। শিম চাষে উপার্জিত টাকা দিয়েই এলাকার কৃষকরা সারাবছর জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।  

গাছ থেকে শিম তুলছেন এক নারী।  ছবি: বাংলানিউজ তবে আড়ৎদার, ব্যাপারী ও মধ্যসত্ত্বভোগী সিন্ডিকেটের কারণে বরাবরই এখানকার চাষিরা তাদের উৎপাদিত শিমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।  

বর্তমানে যেখানে স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম ২৫ টাকা দরে  বিক্রি হচ্ছে, সেখানে এখানকার কৃষকরা পাইকারি বাজারের নিয়োগকৃত আড়ৎদার ও ব্যাপারী সিন্ডিকেটের কাছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে কৃষকদের অনেক কষ্টে উৎপাদিত  পণ্যের লাভের অধিকাংশই চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে।

দিদারুল ইসলাম, পরিমল বিশ্বাসসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, মাগুরা পাইকারি কাঁচাবাজারের নির্দিষ্ট কিছু আড়ৎদারদের কাছে তারা শিম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কারণে তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত শিম ঢাকা থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির লাভের সব অংশই চলে যাচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের  পকেটে।

শ্রীকান্ত বিশ্বাস নামে একজন কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে প্রতি কেজি শিম ক্ষেত থেকে তুলতে খরচ হয় দুই টাকা, এর পর রয়েছে পরিবহন ও আড়ৎদারী খরচ। প্রতি কেজি শিম বিক্রি করে বর্তমানে কৃষকের পকেটে যাচ্ছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। অন্যদিকে মধ্যসত্ত্বভোগীর পকেটে যাচ্ছে প্রায় ১৫ টাকা।

গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় শিম।  ছবি: বাংলানিউজবিষু সরকার নামে এক ব্যাপারী বলেন, মাগুরা লক্ষ্মীকন্দর গ্রামের শিম অত্যন্ত মানসম্পন্ন। তাছাড়া গাছ থেকে তুলে প্রক্রিয়াজাত করার পর এ শিম দীর্ঘদিন ভাল থাকায় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। যে কারণে ঢাকার আড়ৎদাররা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ শিম রপ্তানি করে থাকেন।  

তবে কৃষকের নায্যমূল্য প্রাপ্তির ব্যাপারে তারা বলেন, কাঁচাপণ্যের ব্যবসায় অনেক ঝুঁকিও রয়েছে, যে কারণে কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে দামের তারতম্য রয়েছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন বলেন, লক্ষ্মীকন্দর গ্রামের প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। এখানকার শিম সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তারা এলাকায় নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

জেলা মাকের্টিং অফিসার জাকির হোসেন বলছেন, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শিমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে শিমের দাম অনেক বেশি। জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।