ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পণ্য বাজারজাতকরণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২০
পণ্য বাজারজাতকরণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দরকার

ঢাকা: বাংলাদেশের কৃষকরা পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যাপারে অজ্ঞ, এ ব্যাপারে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (১১ মে) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং ও ভারতীয় থিংক ট্যাঙ্ক এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স-এর যৌথ উদ্যোগে ‘কৃষির উন্নয়ন এবং বাণিজ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা: বাংলাদেশ-ভারত প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।

সূচনা বক্তব্যে ড. রায়হান বাংলাদেশ ও ভারতের কৃষি বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরেন।

বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে এ দুই দেশের বাণিজ্য ও কৃষির সমস্যাগুলো নিয়েও তিনি সংক্ষেপে আলোকপাত করেন।

বিশেষ বক্তব্যে সব্যসাচী দত্ত কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর ভূমিকা সম্পর্কেও আলোচনা করেন তিনি। এ ধরনের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দুই দেশের থিংক ট্যাঙ্কগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে মত দেন তিনি।

আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদ সাত্তার বাংলাদেশের কৃষি বাজারের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন যে চলমান মহামারির ফলে এই সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়ে উঠছে। মহামারির ফলে ভোক্তাদের আয় কমে যাওয়ায়, কৃষি পণ্যের বিক্রি বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে মহামারির আগে কৃষি বাজার কাঠামোয় যে সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলো দূর করতে বাংলাদেশের কৃষি বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন ঘটা দরকার। কৃষি ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতার তিনটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে তিনি চিহ্নিত করেন: বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠান (শিক্ষা, গবেষণা, বাজার কাঠামো) এবং পরিবেশ।

মহামারির ফলে গবাদি পশু ও মৎস্য বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড কনজ্যুমার এনগেজমেন্ট টিম লিডার মাহাদী ফয়সাল। তিনি বলেন, বন্দরগুলো বন্ধ থাকায় দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের অভাব দেখা যাচ্ছে এবং মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে। শস্য ফলন উত্তর ক্ষতি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সক্ষমতার অভাব উল্লেখ করে তিনি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাহতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, স্ট্রাকচারাল গ্র্যাভিটি মডেল অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হতে পারে। কিন্তু হচ্ছে তার মাত্র শতকরা ২০ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে এ অঞ্চলের বাণিজ্যে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা কর নয়, এমন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।

বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ভারত যে কড়াকড়ি আরোপ করে, সেটি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে, কর হিসেবে বিবেচনা করে দেখলে প্রায় ৯ গুণ বেশি। ফলে, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে সহযোগিতা বাড়াতে হবে, নথিগত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে এবং সর্বোপরি স্থলবন্দরে কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ প্যানেল আলোচনার পরে ওয়েবিনারে জুম এবং ফেসবুকের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিগ ডাটা ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও তারা আলোচনা করেন। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যকার কূটনৈতিক সমঝোতা নিয়েও আলোচনা হয়। পরবর্তীকালে প্যানেল আলোচকরা অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

সমাপনী বক্তব্যে ড. রায়হান সার্বিক আলোচনার একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন ভবিষ্যতেও সানেম ও এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের এমন যৌথ উদ্যোগের ধারাবাহিকতা ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২০
এসই/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।