বিগত বছরগুলোতে পাট বিক্রি করে লাভ না হলেও গত বছর দাম পেয়ে ভালো লাভ হয়েছে চাষিদের। যে পাট ৬০০-৭০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতো চাষিরা সেটা ১৭-১৮শ’ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছে।
কুষ্টিয়া জেলা পাট অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে মোট পাটের আবাদ হয়েছে প্রায় ৯৬ হাজার ৫১৩ একর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৪ হাজার ২৩৫ একর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ হাজার ২৭৮ একর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া সদরে ৬৭৯২ একর, কুমারখালীতে ১২৩২৫ একর, খোকসায় ১০৬২১ একর, মিরপুরে ১৭০৯২ একর, ভেড়ামারায় ৮৭০৬ একর এবং দৌলতপুরে ৪০৯৭৭ একর। তকে এর মধ্যে ঝূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে যে বৃষ্টিপাত হয় এতে ৯৬৫১ একর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯০ হাজার ৫০০ একর জমি। সে বছর পাটের আবাদ হয়েছিল ৮৯ হাজার ৫৩৪ একর জমিতে। এ বছর পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৪ বেল।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের চৌদুয়ার এলাকার চাষি মামুন আলী বাংলানিউজকে জানান, আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পাট চাষ করি। তবে দিন দিন পাটের দাম ভালো না পাওয়ায় অনেক চাষি পাট চাষ ছেড়েই দিয়েছিল। গত বছর আমি মাত্র এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। ১৭শ’ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করেছিলাম। দাম ভালো পাওয়ার কারণে এবং লাভবান হওয়ায় এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের রোগবলাই তেমন একটা নেই। পাটও বেশ ভালো হয়েছে। দাম ভালো পেলে লাভ হবে ভালোই।
একই এলাকার কৃষক নবীছদ্দিন শেখ বাংলানিউজকে জানান, এক বিঘা জমিতে পাট করতে ৬-৮ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। আমি গত বছর তিন বিঘা জমিতে পাট করেছিলাম। বিঘাপ্রতি ১০-১১ মণ করে ফলন পেয়েছিলাম। দামও ভালো ছিল। ১৮শ’ টাকা মণ বিক্রি করেছিলাম। তাই এবারো তিন বিঘা পাটের আবাদ করেছি।
পাট চাষের ক্ষেত্রে পাটের জমির আগাছা দমন, পাট পাতলাকরণের ক্ষেত্রে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। যেহেতু শ্রমিকের সংকট দেখা দেয় তাই কৃষকরা বিকল্পভাবে পাটের পরিচর্যা করেও লাভবান হচ্ছেন।
মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া এলাকার কৃষক সিরাজ মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, বিঘা প্রতি কমপক্ষে ১৫-২০টা লেবার লাগে শুধুমাত্র পাটের আগাছা দমন করতেই। আবার ৪-৫টা শ্রমিক লাগে পাট পাতলা করতে। জনপ্রতি ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা দেওয়া লাগে। আবার শ্রমিকও পাওয়া যায় না। তাই বাজার থেকে আগাছা নাশক এনে দিয়েছি। ৮০ টাকায় পাটের জমির ঘাস পুরো পরিষ্কার। এখন শুধু ৪টা লেবার নিয়ে বাছাই দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগে ফসল তামাক ছিলো। তাই জমিতে বেশি সারের প্রয়োজন হয় না। পাট চাষ ইদানিং খুবই লাভজনক হয়েছে। আর পাটের দাম তো বেশ ভালো।
কৃষক মুক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পাট চাষিদের তুলনায় বেশি লাভ করে পাট ব্যবসায়ীরা। চাষিরা গরিব হওয়ায় পাট উঠলেই বাজারে বিক্রি করে দেয়। তাই তুলনামূলক কম দাম পায় চাষিরা। তবে গত বছর থেকে পাটের দাম ভালোই। এবার পাটও বেশি মাঠে।
এদিকে পাট চাষিদের যেকোনো সমস্যায় মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, কৃষকরা যে ফসলে লাভ পায় সেটি চাষে আগ্রহ দেখায়। পাটের দাম ভালো হওয়ায় তারা পাট চাষ করছেন। পাটের বিভিন্ন রোগ ও পোকা দেখা দিলে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
কুষ্টিয়া জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে জানান, পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা পাট চাষ বেশি করে। এ বছর পাটের রোগ বলাই কম এবং গ্রোথও বেশ ভালো। আশা করছি পাটের উৎপাদনও ভালো হবে।
কুষ্টিয়া পাট অধিপ্তরের মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, কৃষক পর্যায়ে পাটের দাম বেশ ভালো। গত বছর কৃষকরা ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ হিসাবে পাট বিক্রি করেছে। যখন পাট ওঠে তখনও ১৭-২২শ টাকার পর্যন্ত দাম পেয়েছে। এছাড়া জেলার প্রায় ১ হাজার ৮০০ পাট চাষিদের প্রণোদনা প্রকল্পের মাধ্যমে পাট বীজ, রাসনায়িক সার দেওয়া হয়েছে। মূলত পাটের দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
এনটি