বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে এই পরিসংখ্যান দেন।
বগুড়ার লাল টুকটুকে মরিচের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে।
সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ও ধুনট উপজেলার আব্বাস আলী, জিয়াউল, কোব্বাত আলীসহ একাধিক চাষি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর টানা ৩ থেকে ৪ মাস চরাঞ্চলের চাষিরা মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় পার করেন। উর্বর মাটির কারণে চরের জমিতে মরিচের ফলন ভালো হয়। চরের মরিচ গুণে-মানে ও স্বাদে অতুলনীয়। সারাদেশেই চরের মরিচের চাহিদা রয়েছে আলাদা। সবমিলে চরের লাল টুকটুকে মরিচের খ্যাতি দেশজুড়ে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
তারা জানান, বগুড়া জেলার উৎপাদিত মরিচ দেশের নামিদামি অনেক কোম্পানি বা বড় বড় প্রতিষ্ঠান কিনে থাকে। প্রতিবছর চাষিরা এ সুযোগটি কাজে লাগান। এ কাজে বাড়ির নারীরাও সমানভাবে সংযুক্ত থাকে। মরিচ লাগানো, উঠানো, শুকানো ও বস্তায় ভরা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পুরুষকে সহযোগিতা করেন নারীরা। বাড়তি আয়ের আশায় সবাই একযোগে মরিচের ক্ষেতে ব্যস্ত থাকেন।
আব্বাস আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তিনি যমুনার বুকে মরিচ চাষ করে থাকেন। এ বছর রবি মৌসুমে মরিচ চাষে বাম্পার ফলনে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। যমুনার বুক খালি হলেই নাকি কপাল খুলে যায় তার। এ অঞ্চলের চাষিরা পানি নেমে যাওয়া মাত্রই তোড়জোড় শুরু করে দেয় মরিচ চাষে।
আব্বাস আলী আরও জানান, গেলো রবি মৌসুমে তিনি সাড়ে ৯ বিঘা জমিতে ‘খ্যাতির মরিচ’ লাগিয়েছিলেন। বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক মিলিয়ে তার মোট খরচ হয়েছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো। শুকনো মরিচ হিসেবে প্রতিবিঘায় ফলন হয়েছিল অন্তত ৭ মণ।
তিনি আরও জানান, মরিচ চাষাবাদে বেশি ব্যয় পড়ে শ্রমিক ও কীটনাশকে। মরিচ গাছগুলো ঠিক রাখতে প্রায়ই প্রতিদিনই নিয়মানুযায়ী ওষুধ স্প্রে করতে হয়। সর্বোপরি ক্ষেতের গাছগুলোর ঠিকভাবে দেখভাল করতে হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ায় গেলো রবি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় ৭ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। এরমধ্যে সিংহভাগ মরিচ চাষ হয় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায়। শুকনো মরিচ হিসেবে প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ২ দশমিক ৩ মেট্রিকটন হারে। এ হিসেবে গেলো মৌসুমে এ জেলায় মরিচ উৎপাদন ১৭ হাজার ৬৩১ মেট্রিকটন। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩০৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
তিনি জানান, প্রতিবছর রবি মৌসুমে মরিচের চাষাবাদ হয়ে থাকে সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত। এ জেলার কৃষকরা জমিতে স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করে থাকেন। মরিচ লাগানোর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় চাষিরা তা উঠানো শুরু করেন। প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে প্রায় তিনমাস একটানা মরিচ উঠানো হয়। গুণগত মান ভালো বলেই দেশব্যাপী এ জেলার মরিচের সুনাম রয়েছে। এছাড়া মরিচের ঝাঁজ-ঝাল ও দারুণ সুগন্ধ রয়েছে। অনেক বড় বড় কোম্পানি এখানকার মরিচ কেনায় বিনিয়োগ করে। এ করাণে জেলার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, চলতি খরিচ-১ মৌসুমে এ জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ লাগনো হয়েছে। মার্চের শেষদিক থেকে জুন পর্যন্ত চাষিরা এ মৌসুমের মরিচ চাষ করেন।
সাধারণত এপ্রিলের শুরু থেকে এ মৌসুমের মরিচ উঠানো ও বাজারজাত করা হয়। কাচা হিসেবে ৮ দশমিক ৫ মেট্রিকটন হারে প্রতি হেক্টর ফলন হচ্ছে। সে হিসেবে বর্তমান খরিপ মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার ৩৭৫ মেট্রিকটন কাচা মরিচের ফলন হবে বলে আশাবাদী তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
কেইউএ/এএটি