ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ক্ষেতের খুঁটির পাখি যখন কৃষকের বন্ধু 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২০
ক্ষেতের খুঁটির পাখি যখন কৃষকের বন্ধু  কৃষিবান্ধব বাঁশ-খড়ের তৈরি খুঁটিতে বসে আছে কালা-ফিঙে। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: গ্রামের ধান কিংবা সবজি ক্ষেতে সব সময় লম্বা খুঁটি পোতা দেখা যায়। কৃষক বিশেষ কারণে একটি পুতে থাকেন। সবুজ ক্ষেতে লম্বা খুঁটিতে সুযোগ পেলেই এসে বসে পাখি। উঁচু থেকে তারা পর্যবেক্ষণ করে প্রিয় খাদ্য পোকা। আর এই পোকা খাওয়ার মাধ্যমে কৃষকের বন্ধু হয়ে যায় পাখি।

ফলন বেশি পাওয়ার জন্য ফসলি জমিতে ছিঁটাতে হয় কৃত্রিম কীটনাশক। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

কিন্তু ধানের জমিতে বসানো লাঠি বা খুঁটিতে পাখি বসার সুযোগ পেলে সে আপনা থেকেই ধানের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে কৃষকের দারুণ উপকার করে।

বাঁশের মুখে কিছু খড় বেঁধে এই বিশেষ লাঠিটি তৈরি করেন কৃষক। এ খুঁটিগুলোই ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমাল পাল বাংলানিউজকে বলেন, এগুলোকে বাংলায় ‘পাখি বসার খুঁটি’ এবং ইংরেজিতে ‘পার্চিং’। পরিবেশবান্ধব বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে আমাদের ডিপার্টমেন্টালি নির্দেশনা রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছি– কীভাবে, কত সহজ পদ্ধতিতে, কম খরচে কৃষির উৎপাদন কমিয়ে বিষমুক্ত ফসলাদি চাষাবাদ করা যায়। পাখি বসার এই লাঠি এরই ধারাবাহিকতার অংশ।

তিনি আরো বলেন, কৃষকদের আমরা সব সময় ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করি। এর কারণ হলো- ধানে যদি কীটনাশক একবার দেয় তবে এর যে স্তর আছে সেই স্তরে স্তরে কীটনাশকগুলো আটকে যায়। যখন পানির অভাব হয় বা রসের অভাব হয় যখন তখন কিন্তু কীটনাশকের বিষগুলো চালের ভেতর ঢুকে যায়। কোনো না কোনোভাবে সেই চালগুলো আমরা খাচ্ছি। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষগুলোও কিন্তু আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। যখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন ওই বিষগুলো নানা রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের অসুস্থ করে তোলে।   

 কৃষিবান্ধব বাঁশ-খড়ের তৈরি খুঁটি।  ছবি: বাংলানিউজ‘যে জন্য আমরা বারবার চাচ্ছি যে, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করে ধানি জমিতে আপনি যদি পাখিদের বসার ব্যবস্থা করে দেন, তবে এই পাখিরাই ধানের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ থেকে ধানকে সুস্থভাবে উৎপাদন হতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিটি পরীক্ষিত। পাখিদের খাবারের প্রধান একটা অংশই হলো পোকামাকড়। ’ 

যেভাবেই হোক এই পদ্ধতিকে আমাদের সফল করতেই হবে। আমি নিজেই আমার ব্যক্তিগত তিন হাজার টাকা দিয়ে প্রায় এক হাজার লাঠি তৈরি করে কৃষকদের দিয়েছি। যাতে তারা এর সুফল লাভ করতে পারে বলে। জানান এ কর্মকর্তা।

কৃষক আসাদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় ধান ক্ষেতগুলোতে পাখি বসার জন্য খুঁটি লাগানোর ফলে আমরা অনেক লাভবান হয়েছি। ঘুরে বেড়ানো ধানের ক্ষতিকর পোকা দমনে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এতে অনেক কাজ হচ্ছে।

ধানের ক্ষতিকারক পোকা সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ব্লকের ১ হাজার ১৩০ হেক্টর এলাকার ধানি জমির মাঝে প্রায় ১ হাজার খুঁটি লাগিয়েছি। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। পাখিরা প্রতিটি খুঁটিতেই ঘুরে ঘুরে বসছে এবং ধানের ক্ষতিকর পোকা ধ্বংস করছে। পাখিদের যদি আপনি বসার সুযোগ না দেন তাহলে সে তার আহার গ্রহণ করতে পারবে না। দূর থেকে উড়ে এসে হঠাৎ পোকা-মাকড় ধরা তার জন্য কষ্টকর হয়। তাই খুঁটির সঙ্গে তার খাদ্যগ্রহণে সুবিধা অনেক বেশি হবে এবং এতে কৃষকের উপকার হচ্ছে।

এখন আমাদের কৃষকদের ক্ষেতে আউশ ধান লাগানো রয়েছে। এই ধানে মাজরা পোকা, পাতামোড়ানো পোকা, খাটো শূরঘাস ফড়িং প্রভৃতি কীটগুলোই পাখি খায়। দিনে কালা-ফিঙেসহ অন্যান্য পাখি এবং রাতে পেঁচাসহ নিশাচর পাখিরা এই খুঁটির উপর বসে ধানের পোকা খেয়ে আমাদের উপকার করছে। আউশ ধানের পরে কৃষকদের ক্ষেতে রোপাআমন ধান লাগানো হবে। এই কাঠিগুলো এভাবেই কৃষকের পরবর্তী ফসলেও উপকার দেবে বলে জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।