মৌলভীবাজার: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চা। বাগানে একটি কুঁড়ি উঁকি দেয়া থেকে শুরু করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়া পর্যন্ত ‘চা’কে পেরুতে হয় নানান ধাপ।
বাংলাদেশের চা বাগানগুলো করোনাকালীন সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠে চায়ের উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাতে নিয়েছে মাঠপর্যায়ের নানান কার্যক্রম। অর্ধশতবর্ষের বেশি বয়েসের পুরাতন চা গাছগুলো উঠিয়ে নতুন করে চা আবাদ করা সেই নতুন কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য অংশ।
নতুন আবাদ এবং পুনঃআবাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। চা বাগানের কোনো এলাকায় বা টিলাতে যেখানে আগে কোনো কিছুই ছিল না, সেখানে নতুন করে চা গাছ লাগানোকে বলে নতুন আবাদ। আর অতি পুরাতন চা গাছগুলোকে তুলে নতুন করে চাষাবাদকে বলে পুনঃআবাদ।
চা গাছে কত বছর পর্যন্ত চা পাতা উত্তোলন করার ক্ষমতা থাকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ফিনলে এর চীফ এক্সিকিউটিভ স্টেট (সিইএস) তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘একেক চা বাগানের একেক রকম সময়সীমা থাকে। চা গাছ হলো শতবর্ষী গাছ। তবে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে চায়ের প্যাটার্ন অনেক বদলে গেছে। গত দশ-পনের বছর ধরে আমরা যেটা দেখছি, এখন পয়ষট্টি থেকে সত্তর বছর পর্যন্ত চা গাছের ইকোনমিক্যাল লাইফ বা অর্থনৈতিক জীবন থাকে। এরপর আর চা উৎপাদনের ক্ষমতা থাকে না। ’
তিনি বলেন, এটা নির্ভর করে। যদি চা বাগানে খুব ভালো ম্যানটেনেন্স থাকে, ভালো মাটি হয়, তাহলে হয়তোবা চা গাছের উৎপাদন ৫-৭ বছর বেশি হতে পারে। তবে চা গাছে সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা থাকে ষাট থেকে পঁয়ষট্টি বছর পর্যন্ত।
‘প্রথমে চা বাগানের সুনির্দিষ্ট জায়গার পুরাতন গাছ তুলে ফেলা হয়। তারপর রিপ্লান্টিং বা পুনঃআবাদ করা হয়। এতে শেড-ট্রি (ছায়াবৃক্ষ) এবং পুরাতন চা গাছ কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সবকিছু উপড়ে ফেলা হয়’ বলে জানান অভিজ্ঞ এই চা বিশেষজ্ঞ।
তাহসিন আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মিনিমাম এক বছর পর্যন্ত সেই সুনির্দিষ্ট জমির মাটিকে রেখে রিহ্যাবিলিটেশন (পুনঃবাসন) করতে হয় ওই মাটি। কারণ সে তো ৭০/৮০ বছরের পেরিনিয়াল ক্রপ বা বহুবর্ষজীবী ফসল ছিল। মাটিতে পেরিনিয়াল ক্রপ থাকলে দেখা যায় যে মাটির নানা প্রকারের উপাদানের কিছুটা পরিবর্তন হয়ে পড়ে। একেক গাছে একেক রকম চাহিদা থাকে। তখন আমরা মাটিকে রিহ্যাবিলিট (পুনঃবাসন) করি। মিনিমান আমরা এক বছর করি। তবে দুই বছর হলে ভালো। এক বছরের বেশি আসলে রাখা যায় না। ’
উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আম গাছের একটা চাহিদা আছে, জাম গাছের একটা চাহিদা আছে কিংবা ধান গাছেরও এক ধরণের চাহিদা রয়েছে। একেক ধরণের গাছের একের রকমের উদ্ভিদগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেহেতু এটা বহুবর্ষজীবী ফসল, ৭০/৮০ বছর তো ছিলই সে। সুতরাং ৭০/৮০ বছর ধরে সে একই মাটি থেকে পুষ্টি নিয়েছে। এখন আবারও আবাদ করছি ৬০/৭০ বছরের জন্য। সে বিবেচনায় মাটিকে তখন কিছুদিন বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এরফলে মাটি তৈরীতে যতো ভালো প্রিপারেশন হবে, প্লান্টেশনটাও আরো ভালো হয়। ’
‘চা বাগানে এই রিহ্যাবিলিটেশন নির্ভর করে অর্থনীতি উপর। যদি সেই বাগানে বা কোম্পানির সামর্থ থাকে তবে তারা তা করতে পারে। আমাদের একটা নিজস্ব সার্কেল রয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা প্রতি বছর রিহ্যাবিলিটেশন করি। কোনো কোনো চা বাগান আবার তাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর না করে কয়েক বছর পর পর করে থাকে। ’
আমরা সাধারণত আমাদের নার্সারিতে উৎপাদিত ১২ মাস থেকে ১৮ মাসের চা গাছগুলোকে রিহ্যাবিলিটেশনের আওতায় এনে রোপণ করি। এটাই আইডিয়াল কন্ডিশন। কারণ, বেশি দেরি হলে চা গাছের শিকড় বেশি নিচে চলে যায়। সে অবস্থায় যখন সেই চারাটা লাগানো হয়, তখন চারাটা নানা সমস্যা সহ্য করে। রিহ্যাবিলিটেশনের পর চারা গাছগুলোকে ধারাবাহিক পরিচর্যার মাধ্যমে চা উৎপাদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ টি-প্লান্টার তাহসিন এ চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
বিবিবি/এইচএমএস