বগুড়া: বগুড়ার মহাস্থান সবজির বাজারে আমদানি বেড়েছে আলুর। তবে, আমদানি বাড়লেও সে তুলনায় দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা।
বুধবার (৩ মার্চ) সকালে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি মোকামখ্যাত বগুড়ার মহাস্থান সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকরা জমি থেকে আলু তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তা বস্তায় ভরে বাজারে নিয়ে আসছেন। বাজারে নির্ধারিত স্থানে ধুয়ে পরিষ্কার করে তা বিক্রির জন্য স্তুপ করে সাজানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে আলু আর আলু। এ যেন আলুর পাহাড়। জমি থেকে তোলার পর সেখানেই পানিতে ধুয়ে নেওয়া হচ্ছে আলু। তা বস্তায় ভরে বাজারে আনা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও আলুতে যেন মাটির ছাপ লেগে থাকছে। পরে বাজারের নির্ধারিত স্থানে আলু ঢেলে ফেলা হচ্ছে। আবার নতুন করে ধোয়ার পর স্তুপ আকারে রাখা হচ্ছে।
চাষিরা প্রতিদিন ভোর থেকেই হাটে আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজি আসতে শুরু করে। ভ্যান, ভটভটি, পিকআপভ্যান, বস্তায় ভরে অনেকেই বাইসাকেলেসহ নানা উপায়ে হাটে আলু নিয়ে আসেন। সেই আলু বাজারের নির্ধারিত স্থানে রাখেন। আলুর গায়ে মাটির ছাপ থাকলে সেখানেই তা ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেসব আলু অর্ধেক কাটা ড্রামে রাখা হয়। এরপর পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করা হয়। পরে সেগুলো স্তুপ আকারে রাখা হয়। বিক্রির পর তা বস্তায় ভরে ট্রাকে উঠানো হয়।
মহাস্থান সবজির বাজারে আসা একাধিক আলু চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম চাষ করা আলুতে ভালো দাম পেলেও পরের ধাপের চাষ করা আলুতে সে তুলনায় দাম পাচ্ছেন না তারা। ক্রমেই আলুর দাম কমে আসছে।
এদিকে উৎপাদিত আলুর দাম নিয়ে বড়ই চিন্তিত কৃষক। খুচরা বাজারে দাম থাকলেও পাইকারি বাজারে আলুর দাম ক্রমেই পড়ে যাচ্ছে। অথচ এসময় এসব আলুর দাম আগে এতো কম যায়নি। কিন্তু মোকামে প্রতিদিন যেন আলুর পাহাড় নিয়ে হাজির হচ্ছেন কৃষকরা।
মহাস্থানহাটে আলু বিক্রি করতে আসা চাষি মজিবর রহমান, তৈয়র মিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবারো তিনি জমিতে আগাম ও পরের মুহূর্তের বিভিন্ন জাতের আলু লাগিয়েছিলেন। শুরুর দিকে আলুর দাম বেশ ভালোই পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তার মতো কৃষক আলুর এমন দাম পেলে হয়তো আগামীতে আলু চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।
চাষি তোফায়েল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি প্রায় সাত বিঘা জমিতে লাল পাকড়ি জাতের আলু লাগিয়েছিলেন। সেই আলু উঠানোর কাজও প্রায় শেষ। কিন্তু বাজারে আলুর দাম কই। প্রথমদিকে একটু ভালো দাম পেলেও এখন আলুর দাম একেবারেই পড়ে গেছে।
মহাস্থানহাটে আলু বিক্রি করতে আসা এসব আলু চাষিরা বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত লাল পাকড়ি, গ্যানোলাসহ কয়েকটি জাতকে আগামজাত হিসেবে ধরে কৃষকরা প্রতিবার শীত মৌসুমে এসব আলু চাষ করে থাকেন। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণ লাল পাকড়ি, এক ধরনের সাদা গ্যানোলা ও কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করেন।
চাষিরা জানান, বর্তমানে প্রতিকেজি লাল পাকড়ি পাইকারি হিসেবে ১০-১২ টাকা, সাদা ধরনের গ্যানোলা জাতের আলু প্রতিকেজি ৮-১০ টাকা ও কার্ডিনাল জাতের আলু ৮-১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দিন যাচ্ছে আর আলুর দাম কমছে যোগ করেন এসব আলু চাষিরা। এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদার অতিরিক্ত আলু প্রতিদিন বাজারে আসছে। মহাজনরা তারই সুযোগ নিয়ে কম দামে আলু কিনছেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বগুড়ায় উৎপাদিত এসব আলু রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি যায়। এছাড়াও দূর-দূরান্তের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর থেকে বেপারী এসে এই মোকাম থেকে আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনে থাকেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলায় উপশী ও স্থানীয় মিলে ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এর মধ্যে উপশী ৪৫ হাজার ৭৮৫ ও স্থানীয় ১১ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। যার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো (উপশী-১০ লাখ ৯১ হাজার ৯০৭ মে. টন ও স্থানীয়-১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩৩ মে. টন) ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২১
এএটি/কেএআর