ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

প্রতিবন্ধী হয়েও কৃষি কাজ করেন শফিউল

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
প্রতিবন্ধী হয়েও কৃষি কাজ করেন শফিউল

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বান্দর ছড়া গ্রামের মো. সফিউল বসর। অসুস্থতায় এক পা হারানো প্রতিবন্ধী শফিউল ভিক্ষা না করে বেছে নেন কৃষি কাজ।

আর তাতেই বাজিমাত। কৃষিতে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেন তিনি। প্রতি বছর তার গড়ে আয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা।  

২০০১ সালে এক অসুখে পড়ে সফিউলের বাম পায়ের হাটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। এরপর স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে পড়েন বিপাকে। চিন্তা করেন কি করবেন। প্রথমে চিন্তা করেন ভিক্ষা করবেন কিনা। পরে চিন্তা করলেন ভিক্ষা করে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে পারবেন না।

কষ্ট হলেও নেমে পড়েন কৃষি কাজে, নিজের ৪০ শতক জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। পরে আস্তে আস্তে অন্যের কাছ থেকে বর্গা ও বন্ধক রেখে জমির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন তিনি প্রায় চার একর জমিতে চাষ করেন বিভিন্ন ধরনের সবজি। সফিউল এখন সারা বছর গোল আলু, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, টমেটো, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করেন।

বর্তমানে তার কৃষি খামারে প্রায় সারা বছর ১০ থেকে ১২ জন কাজ করেন। তাদের তিন বেলা খাবার ও দৈনিক তিনশ’ টাকা করে বেতন দেন। এখন তিনি বছরে প্রায় সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করেন।  

সফিউলের প্রতিবেশী মো. শাহ জালাল জানান, ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব তা সফিউল প্রমাণ করেছেন। উনাকে দেখে আমিসহ গ্রামের অনেকে চাষাবাদ শুরু করেছেন।  

চাষি সফিউল বলেন, পঙ্গু হওয়ার পর স্ত্রী, তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার কীভাবে চলাবো, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। একবার ভিক্ষার কথাও ভেবেছি। পরে তাতেও সংসার চলবে না ভেবে কৃষি কাজের চিন্তা করি। শুরুতে অল্প জমিতে চাষাবাদ শুরু করি। এখন আমি বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার শাক-সবজি বিক্রি করি। এতে আমার প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হয়।

সফিউল ২০১৯ সালে জাতীয় সবজি মেলায় সারা দেশে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

মাটিরাঙ্গা কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সফিউল একজন প্রতিবন্ধী হয়েও কৃষিতে যেভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি প্রতিবন্ধী মানুষ ভিক্ষা না করে কষ্ট হলেও কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এখন একজন সফল কৃষক এবং মাটিরাঙ্গা কৃষি বিভাগ তাকে সর্বদা সহযোগিতা করেছে।  

মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সফিউল প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষা না করে কৃষি কাজ করেন। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়, তিনি একজন সফল কৃষক। তাকে সহযোগিতা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। তাকে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

সফিউল একজন সফল প্রতিবন্ধী কৃষক। এছাড়া তিনি একজন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনকারী। তাকে সরকারের সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
এডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।