ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কাজ শুরু হয়নি ধর্মপাশা হাওরের ৯৫ প্রকল্পের 

পীর আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
কাজ শুরু হয়নি ধর্মপাশা হাওরের ৯৫ প্রকল্পের 

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে সময়সীমার এক মাস পেরিয়ে গেলেও আটটি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে পাউবোর গঠিত ১৭৫টি পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মধ্যে ৯৫টি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।

এ পর্যন্ত মাত্র  ৮০টি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও বাকি প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু করা  হয়নি।

অথচ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওইসব বাঁধের কাজ শেষ করার কথা। এ নিয়ে আগাম বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাওরের কৃষকরা।

হাওর পাড়ের কৃষকদের অভিযোগ, এবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে পাউবোর অধীনে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট হাওরে যাদের জমি রয়েছে এমন প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করার কথা থাকলেও এখানে সুনামগঞ্জ পাউবোর উপ সহকারী প্রকৌশলী ও ধর্মপাশা উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ইমরান হোসেন এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে প্রত্যেকটি কমিটি গঠন করছেন বলেই এখানে কমিটি গঠনসহ কাজে এমন ধীর গতি দেখা দিয়েছে।

তবে উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ইমরান হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মূলত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য এখানে কমিটি গঠন করতে দেরি হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮০টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। পিআইসি গঠন প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। যার তালিকাও দ্রুত প্রকাশ করা হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজও শেষ করা হবে।
উপজেলা কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটির পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী   হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। তবে এখানে প্রকল্প কমিটির চূড়ান্ত তালিকা সম্পন্ন না করেই নিয়ম রক্ষার্থে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত দিনে উদ্বোধন করা হয়। যদিও ওই বছরের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সবকটি পিআইসি তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু এরই মধ্যে কাজের নির্ধারিত সময়ের এক মাস পেরিয়ে গেছে। তবুও প্রকাশ হয়নি চূড়ান্ত পিআইসি তালিকা। আর ৯৫টি প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই করা হয়নি।

সুনামগঞ্জ পাউবোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল, কাইল্যানী, সোনামড়ল, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, গোড়াডুবা, জয়ধনা ও ধানকুনিয়া হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৫৭টি প্রকল্প নির্ধারণ করে। ১৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজে প্রয়োজন হবে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ ঘনমিটার মাটির। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ৪১ হাজার টাকা।  

পাউবোর তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৮০টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে।

হাওরের টঙ্গীর বাঁধ এলাকার কৃষক মোহসিন মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শুরু করেও অনেক সময় আগাম বন্যার কারণে যেখানে ঝুঁকিতে পড়তে হয়, সেখানে এখনও কাজ না হওয়ায় হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জন্য কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা কল্পনা করা যায় না। দ্রুত সবকটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, এবার এখানে কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। পাশাপাশি গঠিত কমিটিগুলোতে উপেক্ষিত হয়েছে হাওরের প্রকৃত কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা। এখানে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকল্প কমিটি।

জয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী বলেন, পিআইসি গঠন প্রক্রিয়ায় এবার আমাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাই কিভাবে পিআইসি গঠন করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও আমাদের অবগত করা হয়নি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনতে হচ্ছে- নীতিমালা অনুযায়ী পিআইসি গঠন হচ্ছে না। তাই নীতিমালা অনুসরণ করে দ্রুত পিআইসি গঠন শেষে পুরোদমে কাজ শুরু করে তা যথা সময়ে শেষ করা উচিত।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলার সদস্য সচিব চয়ন কান্তি দাস বলেন, এখনও পিআইসি তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তার মানে তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। কোনো অদৃশ্য শক্তির বলে এমনটি হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাঁধের কাজ নিয়ে এবার যে গাফিলতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে হাওরে ফসলহানি ঘটলে এর দায় কে নেবে?

উপজেলা কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, আমরা যথাসময়ে এবার বাঁধের কাজ শুরু করেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর সেগুলো ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করা হবে। তবে আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
আরএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।