ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষি জমির সুরক্ষা আইন

‘ব্যবসার টাকা না উঠলে মাটি কাটমুই, কবার জরিমানা করবো আমারে’

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
‘ব্যবসার টাকা না উঠলে মাটি কাটমুই, কবার জরিমানা করবো আমারে’

মানিকগঞ্জ: বর্তমান সরকার যেখানে প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছে ঠিক সেই সময় এক শ্রেণির অসাধু মাটি খেকোরা (ব্যবসায়ী) নানাভাবে জমির মালিকদের ভুল বুঝিয়ে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিনদিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসছে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও সেই নিয়ম না মেনে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা।

নিয়ম অনুয়ায়ী জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য প্রথমে ইউনিয়ন ভূমি অফিস বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদনটি উপজেলা ভূমি অফিস হয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর পৌঁছায়। কয়েক দফায় যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় এবং অনুমোদন হলে সেই কপি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা যথাযথভাবে সংশোধন করে তামিল প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার সদর, ধানকোড়া ও ফকুরহাটি এই তিন ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে কৃষ্টপুর মৌজা থেকে রাত ৯টার পরপর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন চাঁন মিয়া নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। ভোরের আলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই জায়গা থেকে ভেকু সরিয়ে অন্যত্র রাখেন যাতে কেউ বুঝতেই না পারে এখানে মাটি কাটা হয়েছে রাতের আধাঁরে। মাটি কাটা শেষে ওই স্থানে মেশিন দিয়ে পানি ভর্তি করে রাখা হচ্ছে যাতে সবাই ভাবে এখানে আগে থেকে পানি ছিল।  

জানা যায়, দুই বছর আগে মাটি কাটার অপরাধে চাঁন মিয়াকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে তিনি মুচলেকা দেন ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কাজ করবেন না। এরপরও তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের চোখ ফাঁকি দিতে রাতে আঁধারে অভিনব কায়দায় মাটি কাটছেন।

নাম প্রকাশ না করার মর্মে একাধিক ফসলি জমির মালিকরা বলেন, আমরা নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ। এই চাঁন মিয়া নানাভাবে বিপদে ফেলে সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনে ব্যবসা করেন। তাকে বাধা দেওয়াতো দূরের কথা তার সামনে কথা বলার সাহস অনেকেরই নাই। যে কারণে তিনি যে জমির মাটি কাটতে চান সেই জমির মাটি নাম মাত্র টাকা দিয়ে কিনে নেন।

এ বিষয়ে কথা হয় চাঁন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি কি শুধু একাই এ ব্যবসা করি। আমার মতো এই রকম শতশত ব্যবসায়ী আছেন। কারো মাটি তো জোর করে কাটছি না, জমির মালিকরা বিক্রি করে, আমি কিনে বিক্রি করি।  

দুই বছর আগে এই স্থানে মাটি কাটার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত আপনাকে জরিমানা করেছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জরিমানা করেছিল, জরিমানাও দিয়েছি। তবে এখানে যে টাকা ব্যয় করেছি তা না উঠলে তো মাটি কাটমুই। কবার জরিমানা করবো আমারে।

মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের জেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জেলাতে দিনদিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসছে। কারণ প্রতিনিয়তই টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটাগুলো। একে তো পরিবেশের জন্য হুমকি, আবার আমরা হারাচ্ছি ফসলি জমি। তবে এই জমির শ্রেণি পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া আছে আর ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমির পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে যারা এই সুন্দর প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন অমান্য করছে তাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।

সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আরা বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। তবে ওই স্থানে মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি মাটি কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।