বাগেরহাট: প্রচণ্ড তাপদাহ ও ভাইরাসে বাগেরহাটে আশঙ্কাজনক হারে মারা যাচ্ছে বাগদা চিংড়ি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘেরের ছোট-বড় চিংড়ি মরে লাল হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে বাগদায় মড়ক লাগায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার চিংড়ি চাষিরা। পুঁজি হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা, অল্প পানি, হঠাৎ বৃষ্টি ও হোয়াইট স্পট ভাইরাসের কারণে চিংড়ি মরছে- এমনই ধারণা জেলা মৎস্য বিভাগের।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় এবার ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি ঘেরে চিংড়ি চাষ হয়েছে। প্রায় ৭৩ হাজার চাষি এসব চিংড়ি চাষ করছেন। এর মধ্যে মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলায় সর্বাধিক বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। এই চার উপজেলায়ই বাগদায় মড়ক লেগেছে। শত চেষ্টায়ও ব্লাক টাইগারের মৃত্যু রোধ করতে পারছেন না চাষিরা। এর ফলে শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছেন তারা। তবে জেলায় ঠিক কী পরিমাণ চাষি এবং কত টাকার ক্ষতি হবে তা জানাতে পারেনি মৎস্য বিভাগ।
রামপাল উপজেলার মুজিবনগর এলাকার চাষি মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ঘেরে মাছ ছেড়ে তিন চার মাস খাবার দিয়ে যখন বিক্রির সময় হয়েছে, তখনই মড়ক লাগলো। যখন এক-দুইটা করে মরছিল, তখন দোকান থেকে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে মড়ক ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।
একই উপজেলার হুড়কা গ্রামের চাষি তারক রায় বলেন, ঘেরে ব্যাপকভাবে বাগদার মড়ক দেখা দিয়েছে। নানা পরামর্শ নিয়েও কোনো কাজে আসছে না। রাতারাতি ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার চিংড়ি চাষি আবুল হাসান বলেন, ঋণ করে ছয় বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছিলাম। কিন্তু চিংড়ি যখন বিক্রিযোগ্য হয়েছে, তখনই ভাইরাস লেগে সব মরে গেল। কিছুদিন পরই চিংড়ি ধরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি রাজীব সরদার বলেন, আমাদের এখানে ৯০ ভাগ ঘেরের চিংড়ি মরে শেষ। যখন কেজিতে ৭০-৮০ পিস হয়েছে, তখনই মরা শুরু করেছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা ছিল চলতি মৌসুমে ঘেরের পরিবেশ ভালো যাবে এবং গত বছরের লোকসান উঠে আসবে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে যেভাবে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব কিনা জানি না।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, দিন দিন জেলায় চিংড়ি চাষের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। একদিকে পোনা সংকট, অপরদিকে রোগের প্রাদুর্ভাব। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র চিংড়ি চাষিরা নিঃস্ব হয়ে যাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ,এস,এম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের ৯ উপজেলার মধ্যে রামপালের চারটি ইউনিয়নে বেশি চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এছাড়া অন্য কিছু জায়গাতেও চিংড়ি মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। মারা যাওয়া চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি অতিরিক্ত গরম, হোয়াইট স্পট ভাইরাস বা মৌসুমের শেষে ভাইরাস যুক্ত চিংড়ি ঘেরে ছাড়ার কারণে এমনটা হতে পারে। আমরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, জেলার অধিকাংশ ঘের প্রস্তুতের আগে চাষিরা ব্লিচিং পাউডারসহ ভাইরাস মুক্ত করণের যেসব পদ্ধতি রয়েছে তা প্রয়োগ করেন না। তারা গতানুগতিক ভাবে ঘের প্রস্তুত করে চিংড়ির পোনা ছাড়েন । এছাড়া পোনা ছাড়ার আগে সেগুলো ভাইরাস মুক্ত কিনা তাও পরীক্ষা করার সুযোগ নেই তাদের। চাষিদের ঘের প্রস্তুত ও পোনা ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। প্রয়োজনে উপজেলা মৎস্য অফিস ও জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহের জন্য চাষিদের অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
এমএমজেড