কিশোরগঞ্জ: গাঢ় গোলাপী রঙ। রসে টইটম্বুর।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে পাওয়া যায় এ লিচু।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এ গ্রামে থানার এক দারোগা সুদূর চীন থেকে এ জাতের লিচুর চারা এনে রোপণ করেছিলেন। গাছ বেড়ে লিচু ধরার পরে বোঝা যায় এটি আসলে অত্যন্ত সুস্বাদু একটি জাত। এরপর থেকে পুরো মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এ লিচুর চাষ। লিচুটির জাতের সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে এটি গ্রামের নামানুসারে ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’ বলে খ্যাত।
লিচু গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু কেনার জন্য লোকজন মঙ্গলবাড়িয়ায় আসছেন। প্রতি একশ’ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে এখানকার অধিকাংশ লিচুই আগাম বিক্রি হয়ে যায়। পাইকাররা অগ্রিম গাছ কিনে অতিরিক্ত দামে লিচু বিক্রি করে থাকেন। এ লিচুর চাহিদা বেশি হওয়ায় ১৫ দিনের মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এ বছর আট থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে মঙ্গলবাড়িয়ায়।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে এ লিচুর গাছ। পুরো গ্রাম জুড়ে রয়েছে দুই শতাধিক লিচু বাগান। এ বছর লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় লিচু চাষি ও পাইকাররা বেজায় খুশি। তারা এবার ভালো লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি তৌহিদ মিয়া। যাকে সবাই ‘লিচু তৌহিদ ভাই’ নামেই চেনেন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, একটা লিচু খাইলে মনে করবেন যে ২০ টাকা দামের গোল্লা (মিষ্টি) খেলাম। প্রতিদিন ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করি। পরিবারের সব খরচ আসে লিচু বিক্রির টাকা থেকে।
আরেক লিচু চাষি নাইম মিয়া বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামটি লিচু গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশি লিচু গাছ আছে।
লিচু কিনতে এসেছেন সাব্বির হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই লিচু কিনতে মঙ্গলবাড়িয়ায় আসি। লিচু কিনে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে পাঠাই। বড় ভাইয়ের জন্য সিংগাপুর পাঠানো হবে। এ লিচু খেতে অনেক সুস্বাদু।
সাধারণত মঙ্গলবাড়িয়া লিচু ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। পাশাপাশি সিংগাপুর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও মঙ্গলবাড়িয়া লিচু রপ্তানি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবাড়িয়ার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী। এ গ্রামের উৎপাদিত লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের যাবতীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দিয়ে লিচুর আবাদ আরও বাড়ানো এবং সেই সঙ্গে বিক্রির সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় লিচু চাষিসহ সুধীজনেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
এসআই