ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

জোর করে কৃষিজমিতে মাছের ঘের করার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
জোর করে কৃষিজমিতে মাছের ঘের করার অভিযোগ

বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দরিদ্রদের কৃষিজমি দখল করে মৎস্য ঘের করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।  

মাছ চাষের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের নিচ থেকে পাইপ দিয়ে লবণ পানি নেওয়া হচ্ছে ধানি জমিতে।

ফলে ধান চাষও করতে পারছেন না জমির মালিকরা। তেলিগাতী ইউনিয়নের মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার দুইশ’ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ঘের করছেন যুবলীগ নেতা বদিউজ্জামান মজুমদার এবং তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার ও তার লোকজন। এমনকি ঘেরের স্বার্থে সরকারি রাস্তা কাটারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালীদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন জমির মালিক ও স্থানীয় কৃষকরা। নিজেদের জমি দখলমুক্ত করার দাবিতে বুধবার (০১ জুন) দুপুরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় ফসলের মাঠের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে জমি দখলমুক্ত করার পাশাপাশি তাদের বিচার দাবি করেন তারা।  

তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয় কুমার মণ্ডল বলেন, মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দুইশ’ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের করছেন পার্শ্ববর্তী পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ্জাক মজুমদারের ভাতিজা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার এবং তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার। তাদের সঙ্গে স্থানীয় খলিল হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, বেলায়েত হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন। এ দুইশ’ বিঘার জমির মধ্যে দখলদারদের কোনো জমি নেই। এর মধ্যে স্থানীয় অর্ধশত মানুষের ৮০ থেকে একশ’ বিঘা এবং অন্য এলাকার কয়েকজনের একশ’ বিঘা জমি রয়েছে। বদিউজ্জামান ও বাহাররা জমির মালিকদের জমি ভাড়ার টাকাও দেন না। আবার জমি ভাড়া বাবদ টাকা চাইতে গেলে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন তারা। এমনকি টাকা চাইলে কাউকে কাউকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। মৎস্য ঘেরে বাগদা চাষের জন্য বেড়িবাঁধ কেটে জমিতে লবণ পানি প্রবেশ করানোয় আশপাশের ক্ষেতের ধানেরও ক্ষতি করছেন তারা। এ অবস্থায় দখলদারদের কাছ থেকে কৃষকদের মুক্ত না করতে পারলে জমির মালিকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক আব্দুল বারেক হাওলাদার বলেন, মিস্ত্রিডাঙ্গা মাঠে আমার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। কয়েক বছর ধরে বদিউজ্জামান ও বাহাররা আমারসহ এলাকার অনেকের জমি দখল করে ঘের করেছেন। তারা ভাড়ার (হাড়ি) টাকাও দেন না, আবার লবণ পানি ওঠানোর কারণে আমরা ধানও চাষ করতে পারি না। যার ফলে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।  

ঘেরের মধ্যে তিন বিঘা জমি থাকা ফনিভূষণ হাজরা বলেন, এ যেন মগের মুল্লুক। নিজের জমি থাকতে চাল কিনে খাই। তারা যেভাবে লবণ পানি ওঠান, আমরা ধান চাষই করতে পারি না।  

শুধু আব্দুল বারেক হাওলাদার ও ফনিভূষণ নন, এমন বক্তব্য জমির মালিক আব্দুল মান্নান আকন, অমল হাওলাদার, জামেনা বেগম, আলীম খানসহ অনেকের।  

তেলিগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খান জালাল আহমেদ লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি এলাকার নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে কৃষকরা ধানও ফলাতে পারেন না। কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। স্থানীয় কৃষকদের জমি দখলমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা।

তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার বলেন, অন্য ইউনিয়ন থেকে এসে গায়ের জোরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার মানুষের জমি দখল করে খাচ্ছে। এলাকার মানুষ আমার কাছেও অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। দখলদারদের কারণে স্থানীয়রা খুবই বিপদে রয়েছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারেনন না তাদের। তারা এত বেপরোয়া যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের নিচে পাইপ দিয়ে মাঠে লবণ পানি তুলছেন। এলাকার মানুষকে বাঁচাতে এখনই এসব জমি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন।

পঞ্চকরণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার বলেন, কৃষক ও স্থানীয়রা যে অভিযোগ করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। ওই ঘেরে আমার বাবা ও চাচাদের ১২ বিঘা জমি রয়েছে। আমরা কারও জমি দখল করিনি। ঘেরে অন্য যাদের জমি রয়েছে, তাদের নিয়মিত হাড়ির টাকা দিয়েই ঘের করা হয়। একটি প্রভাবশালী মহল এ ঘের বন্ধ করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সভাপতি বাহার হাওলাদার বলেন, এ ঘেরে প্রায় ৬০ জন লোকের জমি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪ লোক আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা কারও সঙ্গে জোর জবরদস্তি করিনি। সবাই স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে জমি লিজ দিয়েছেন।

পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাজ্জাক মজুমদার বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ওখানে আমাদের নিজেদের জমি রয়েছে। আমার ভাগ্নে ওই জমি দেখভাল করে। এছাড়া অন্য মালিকদের জমির জন্য হাড়ির টাকা দেওয়া হয়।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘের সংক্রান্ত দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। আগামী রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।