ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বৃষ্টি নেই, কৃষকের মন ভারি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
বৃষ্টি নেই, কৃষকের মন ভারি

ফেনী: অনাবৃষ্টি এবং সার, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের খরচ বেড়েছে পদে পদে।

ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের ভাষ্যমতে, চলতি আমন মৌসুমে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত কানি প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হতে পারে।

যা গত মৌসুমে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিল।
 
খরচ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে পরশুরামের বীরচন্দ্রনগর এলাকার কৃষক আফছার হোসেন বাবু বলেন, গত আমন মৌসুমে এক কানি জমি চাষে ট্রাক্টর বাবদ খরচ দিতে হয়েছে সাড়ে তিনশ টাকা। যা চলতি বছর জমি ভেদে ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। সেচেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। আগের থেকে এখন শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিতে কানি প্রতি ৫শ থেকে ৭শ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। এছাড়া আরও যোগ হচ্ছে সার এবং শ্রমিকের উচ্চ মজুরি। আমজাদ হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, মৌসুমের শুরুতে রোপণের সময় এবং মধ্যবর্তী সময়ে আগে বেশকিছু সার প্রয়োগ করতাম। যা এ বছর ঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এক বস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি সারের জন্য আগের চেয়ে বস্তা প্রতি এখন সাড়ে ৮শ টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। কয়দিন পরে জমিতে আগাছা বাছাইয়ের জন্য আবার ৬শ থেকে ৮শ টাকা দরের শ্রমিকের মজুরি দিতে হবে। এতো খরচের পর মৌসুম শেষে রোগবালাই থেকে টিকে উঠে ঠিকভাবে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তো শঙ্কা আছেই।

ধান ও চালের দামের সমন্বয় নেই অভিযোগ করে সোনাগাজীর সোনাপুর এলাকার কৃষক নছির মিয়া বলেন, দেশে চালের দাম যেভাবে কয়দিন পরপর বাড়ে সে তুলনায় ধানের দাম বাড়ে না। এখন দৈনিক ২ জন শ্রমিকের মজুরি দেড় মণ ধানের বাজারদরের চেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনরা যদি বিষয়টি এখনই গুরুত্ব না দেয় তাহলে প্রান্তিক কৃষকদের আবাদ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলায় ২১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকের খরচ বাড়ায় কিছুটা সমস্যা হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন প্রভাব পড়বে না।

কৃষকের বাড়তি খরচ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ডিজেল, ইউরিয়া সার এবং কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে কৃষক ইউরিয়া সার ব্যবহার না করলে জমিতে সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত হবে। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৫০ শতাংশের বেশি জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে বলেন তিনি।

সংকট মোকাবিলা করে নির্ধারিত সময়েই আবাদ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কৃষিবিদ।

চলতি মাসের ১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়ে ডিলার পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২২ টাকা পুননির্ধারণ করা হয়েছে। এর চারদিন পরই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। ডিজেল ও কেরোসিনের ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি দাম ৩৪ টাকা, পেট্রোল ৪৪ টাকা এবং অকটেনে বেড়েছে ৪৬ টাকা। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কৃষকের চাষাবাদ খরচ ও ধানের দামের সমন্বয় না করলে আগামীতে কৃষিখাত সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনরা।

পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে সেচ নিয়েও বিপাকে পড়েছে কৃষক।

সম্প্রতি দেশে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ নিয়ে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার শ্যালো চালকদের দেওয়া তথ্যমতে, মূল্য বৃদ্ধিতে এক ঘণ্টায় শ্যালো চালনায় এখন ১০৫ টাকার বেশি বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পরশুরামের শহীদুল ইসলাম চৌধুরী নামে এক শ্যালো মালিক জানান, আগে এক কানি জমি সেচ দিতে ১০৫ টাকার ডিজেল খরচ হতো। যা এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এ মৌসুমের দেড়মাস ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন কৃষক আবার নতুনভাবে বাড়তি দাম দিতেও অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।

সদর উপজেলার কাজীরবাগ এলাকার জাকির হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললেও আগের মতো বৃষ্টি নেই। এ অবস্থায় সেচ দেওয়ার একমাত্র ভরসা শ্যালো বা গভীর নলকূপ। এখন আবাদের জন্য বর্ধিত দামে ডিজেল কিনে সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এভাবে হলে কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

আবুল কালাম নামে আরেক চাষি বলেন, চলতি মৌসুমে নিজ মালিকানাধীন ৪ কানি জমির জন্য প্রায় ৮ হাজার টাকার বেশি শুধু সেচের জন্য খরচ হচ্ছে। নিজের জমি তাই অনাবাদীও রাখতে পারছি না। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
এসএমএকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।