ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সাতক্ষীরায় ঘেরের চারপাশে সবজি চাষে বিপ্লব

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
সাতক্ষীরায় ঘেরের চারপাশে সবজি চাষে বিপ্লব

সাতক্ষীরা: চারদিকে সবুজে ঘেরা। গাছ, লতা-পাতার মধ্যে ঝুলছে হাজার হাজার লাউ, মিষ্টি কুমড়া, উচ্ছে, চিচিঙ্গা, চাল কুমড়া এমনকি তরমুজও।

সেই সঙ্গে ঘেরের বেড়ি (পাড়) ধরে বেয়ে চলেছে পুঁইশাকের ডগা, গাছ ভরে ধরেছে ঢেঁড়স।

এ দৃশ্য ঘের অধ্যুষিত জেলা সাতক্ষীরার। ঘেরের বেড়িতে বাঁশ, খুটি ও নেটের জাল দিয়ে মাচা বানিয়ে তাতে সোনার ফসল ফলিয়েছেন চাষিরা। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

একরের পর একর মাছের ঘেরের বেড়িতে উৎপাদিত এসব শাক-সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ঘেরের পানিতে মাছ, আর চারপাশের বেড়ি ধরে মাচায় শাক-সবজি চাষের এ পদ্ধতি সাতক্ষীরা জেলাকে যেন নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে তুলছে দেশব্যাপীর কাছে।  

যদিও চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে যেমন মৎস্য চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ঘেরের বেড়িতে শাক-সবজি চাষও ব্যাহত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা নগরঘাটা, আশাননগর, কাপাসডাঙ্গা, মিঠাবাড়ি ও হরিনগর, কালিগঞ্জের মৌতলা, সাতক্ষীরা সদরের দেবনগর, লাবসাসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, হেক্টরের পর হেক্টর জমির মৎস্য ঘেরের বেড়ি সবুজ শাক-সবজিতে ছেয়ে গেছে।

এসব এলাকার মৎস্য চাষিরা মাছের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ঘেরের বেড়িতে বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে খুব ভালো।

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার নগরঘাটার ইদ্রিস আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমির ঘেরে মাছ ও ঘেরের বেড়িতে শাক-সবজি চাষ করেন। মাচা পাতা, সার, বীজসহ অন্যান্য খাতে বিঘা প্রতি সাত-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ থেকে তিন মাসে খরচের তিনগুণ আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি জানান, এখন পাইকাররা প্রতি পিস লাউ ১২ টাকা, উচ্ছে ৩০ টাকা কেজি, চাল কুমড়া ছয়-সাত টাকা পিস, পুঁইশাক ১০ টাকা আটি, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতি দুই দিন পরপর তার ঘেরের বেড়িতে অন্তত ১০০টি লাউ বিক্রির উপযোগী হয়। তিন মাস এভাবেই ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

কাপাসডাঙ্গার প্রদীপ গাইন বলেন, এ বছর প্রথমে বৃষ্টি না হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া বড় হচ্ছে কম। অন্যান্য বার একেকটির ওজন পাঁচ-ছয় কেজি হলেও এবার তিন-চার কেজির বেশি হচ্ছে না। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, আশা করছি, ফলন ভালো হবে।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্র ঘেরের বেড়িতে শাক-সবজির আবাদ হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে যেমন পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, তেমনি শাক-সবজির দামও রয়েছে ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে লাউ প্রতি পিস ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি, উচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ২০ টাকা কেজি, চাল কুমড়া ১২ টাকা পিস, পুঁইশাক ১৫ টাকা আটি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, ঘেরের বেড়িতে শাক-সবজি আবাদে সাতক্ষীরা জেলা মডেল হয়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে জেলার ৮৭৫ হেক্টর জমির ঘেরের বেড়িতে ১৬ হাজার ৬২৫ টন শাক-সবজি উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে খামারিদের যেমন আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি জেলাবাসীর পুষ্টির চাহিদাও মিটছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।